বর্ধমান, ১৪ ফেব্রুয়ারিঃ- রায়নায় এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এল। বুধবার বিকালে রবিয়েল মল্লিক নামে এক তৃণমূল কর্মীকে বেলসর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে রায়না থানার পুলিশ। বর্তমানে জেল হেপাজতে থাকা তৃণমূল নেতা নিয়ামল হক গোষ্ঠীর লোকজন তাকে ধরে মারধরের পর পুলিশের হাতে তুলে দেয়। রায়নায় তৃণমূলের গোষ্ঠী বিন্যাসে জোৎসাদী গ্রামের বাসিন্দা রবিয়েল নিয়ামলের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বামদাস মন্ডলের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। নিয়ামল গ্রেপ্তার হওয়ার পর রবিয়েল এবং তার কয়েকজন সঙ্গী মিলে দলেরই অপর গোষ্ঠীর লোকজনের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, ধৃতের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২ রাউন্ড কারতুজ উদ্ধার হয়েছে। এলাকা দখলের জন্য মুর্শিদাবাদ থেকে সে আগ্নেয়াস্ত্র এনে মজুত করেছিল বলে পুলিশকে সে জানিয়েছে। রায়নার বিভিন্ন জায়গায় আরও অস্ত্র মজুত রয়েছে বলে ধরা পড়ার পর জেরায় সে জানিয়েছে। লুকিয়ে রাখা অস্ত্র উদ্ধারের জন্য ধৃতকে ৭ দিন পুলিশি হেপাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার। ভারপ্রাপ্ত সিজেএন কেয়া মন্ডল ধৃতকে ৪ দিন পুলিশি হেপাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
গত কয়েকমাসে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রায়নার বিভিন্ন জায়গা। দু’টি গোষ্ঠীর এলাকা দখলের লড়াইয়ে হামেশাই বোমাবাজি, বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর ঘটনা ঘটে। তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বকে উসকে দিতে তাতে গোপনে মদত জোগায় সিপিএম। নিয়ামলের গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ধরা পড়ার পর জেরায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে সিপিএমের মদত জোগানোর বিষয়টি ফাঁস করে ধৃত তৃণমূল নেতা। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে রায়নার সিপিএম নেতা শেখ কওসর আলিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কওসরের বাড়ি এবং দেখানো জায়গা থেকে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। জেরায় সেও তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহের কথা স্বীকার করে।
নিয়ামল এবং কওসরের গ্রেপ্তারের পর এলাকায় জমি ফিরে পায় বামদাসের গোষ্ঠী। এরপরই দলেরই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজনের বাড়িতে হামলা চলে। গত ১৮ জানুয়ারি বাঁধগাছার গোলাম আম্বিয়ার বাড়িতে হামলা এবং লুটপাট চালায় রবিয়েল সহ আরও কয়েকজন। তার আগে বেলসর গ্রামের মইনুদ্দিন মল্লিকের বাড়িতে হামলা চালানোতেও রবিয়েলের নাম জড়ায়। এছাড়াও পুলিশের উপর হামলা চালানো নিয়ে তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা রয়েছে রায়না থানায়।
অন্য একটি মামলায় খালেরপুল এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকেও আজ অস্ত্র সহ রায়না থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ধৃতের নাম আবেল মীর্জা। বাড়ি রায়না থানা এলাকার জোৎসাদী গ্রামে। ধৃতের কাছ থেকে পুলিশ ১ টি নাইম এমএম পিস্তল এবং ৩ টি কারতুজ উদ্ধার হয়েছে।
এদিকে রায়না থানা এলাকায় পরপর অস্ত্র উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রচুর পরিমানে অস্ত্র মজুত করা হলেও এতদিন তার হদিশ পায়নি পুলিশ। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা বলেন, রাজনৈতিক রং বিচার না করেই অপরাধীদের ধরা হচ্ছে। অপরাধীদের ধরতে এবং অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান চলবে।