বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সিপিআই(এম)কে রাজনৈতিকভাবে হারাতে ফের ৪৯ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাকেই হাতিয়ার করল তৃণমূল কংগ্রেস। বিশেষত এবারেও যে সময় কংগ্রেস এবং সিপিএমের মধ্যে ভোটের আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে সেই সময় বর্ধমানের সাঁইবাড়ির ঘটনাকেই ফের উসকে দিল ভোটের রাজনীতি। ২০১৯ সালের এই লোকসভা নির্বাচনে ফের কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোটের জল্পনা চলছে। ইতিমধ্যেই পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনকে সিপিআই(এম)-এর হাতে ছেড়ে দেওয়ায় রীতিমত ক্ষুব্ধ কংগ্রেস কর্মীরা। সাঁইবাড়ির রক্তে রাঙা সিপিএমের কোনো প্রার্থীকে কোনো সহায়তা করতে রাজী নন কংগ্রেস কর্মীরা। আর এর মাঝেই রবিবার সাঁইবাড়ি ঘটনার ৪৯ তম বছরটি পালিত হল। এদিন শহীদ বেদিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ-সহ তৃণমূল নেতা এবং সাঁইবাড়ির পরিবারের সদস্যরাও। অন্যদিকে, এদিন ভাতারে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীসভাতেও উঠে আসে সাঁইবাড়ির ঘটনা। দলীয় কর্মীসভায় কর্মীদের উজ্জীবিত করতে ভাতারের বিধায়ক সুভাষ মণ্ডলও হাতিয়ার করলেন সাঁইবাড়ির হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে। তবে এবারও নজর কাড়ল কংগ্রেসের এই দিনটি পালনের বিষয়টি। বর্ধমানের এই সাঁইবাড়ি ছিল আগাগোড়া কংগ্রেসী পরিবার। নিহত মলয় সাঁই এবং প্রণব সাঁই–ও সেই সময় কংগ্রেসের নেতা ছিলেন। কিন্তু রাজ্যে পালা বদলের পর প্রতিবছর সাইঁবাড়ির এই হত্যাকাণ্ডের দিনটি পালনের ক্ষেত্রে কংগ্রেস নয় তা কার্যত দখলে চলে গেছে তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে। অন্যদিকে, কংগ্রেস এই দিনটি বিগত কয়েকবছর ধরেই পালন করে আসছে বর্ধমান শহরের বিসি রোডের জেলা কংগ্রেস ভবনে। কংগ্রেস ভবনে এই অনুষ্ঠানের হাজির ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি আভাষ ভট্টাচার্য, কার্য্যকরী সভাপতি কাশীনাথ গাঙ্গুলী, জেলা কংগ্রেস নেতা গণেশ দাস প্রমুখরাও। উল্লেখ্য,১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ, এই দিনেই ঘটেছিল সেই নারকীয় হত্যালীলা বর্ধমান শহরের প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনের সাঁই বাড়িতে। সিপিএমের সমর্থকরা সশস্ত্র অবস্থায় চড়াও হয়েছিলেন এইদিন সাতসকালে। সাঁই বাড়ির ভেতর ঢুকে খুঁচিয়ে খুন করা হয়েছিল সাঁই বাড়ির দুই ভাই মলয় ও প্রণব সাঁইকে। সেই সময় বাড়িতে আসা গৃহ শিক্ষক জীতেন রায়কেও খুন করা হয়েছিল। বর্ধমানের সাঁই বাড়ির এই ঘটনা সেই সময় শুধু বাংলা জুড়েই নয়,সিপিএমের এই নৃশংস্য হত্যাকাণ্ডের নিন্দায় সরব হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধীও। সাঁই বাড়ির এই ঘটনাকে ঘিরে বারে বারেই রাজনৈতিক তরজা চরমে যেমন উঠেছে, তেমনি সাঁই বাড়ির ঘটনার ওপর রং চড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার রেশ আজও চলছে। রাজ্যে পালা বদলের পর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মেনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কমিশন গঠন করে দেন। যদিও এখনও কমিশনের রিপোর্টে প্রকাশিত হয়নি। আদপেও তা কবে হবে কেউই জানেন না। কিন্তু বর্ধমানের সাইঁবাড়ির ঘটনার প্রায় ৪৯ বছর পরও সেই ঘটনাকেই সিপিএম কংগ্রেসের বিভাজনের ক্ষেত্রে তুরুপের তাস হিসাবে খেলার চেষ্টা আগেও হয়েছে এখনও হচ্ছে।
Tags Sain Bari Sain Bari Killing Sain Bari massacre Sainbari Sainbari incident Sainbari Killing Sainbari massacre
Check Also
বাংলা আবাস যোজনায় নাম দোতলা বাড়ির মালিক বিধায়কের শাশুড়ি এবং পঞ্চায়েত প্রধানের
খণ্ডঘোষ (পূর্ব বর্ধমান) :- পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়ির একাধিক বাড়িতে হুকিং …