বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কর্মী পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তাঁকে খুনের অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ধৃতদের নাম তারক দাস, আভা দাস, রাজা দাস, প্রবীর দে ও প্রসেনজিৎ কৈবর্ত্য দাস। তারক ও আভা সম্পের্ক স্বামী-স্ত্রী। রাজা তাদের ছেলে। বর্ধমান শহরের বড়নীলপুরের নতুনপাড়ায় প্রসেনজিৎ-এর বাড়ি। বাকিদের বাড়ি শহরের বেচারহাট কলোনিতে। বুধবার দুপুরে বাড়ি থেকে পুলিস তাদের গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। বাকি অভিযুক্তদের ধরতে এবং তদন্তের প্রয়োজনে তারক, রাজা, প্রবীর ও প্রসেনজিৎকে ৫ দিন পুলিসি হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার রামেশ্বর মাহাত। ধৃতদের আইনজীবীরা মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর কথা বলে পুলিসি হেফাজতের আবেদনের বিরোধিতা করে জামিন চান। সরকারি আইনজীবী নারদ কুমার ভূঁইঞা পুলিসি হেফাজতের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন। সওয়াল শুনে ৪ জনকে ৫ দিন পুলিসি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা। আভাকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে ১১ জুলাই ফের আদালতে পেশের নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিস জানিয়েছে, বুধবার সকালে বাড়ির লাগোয়া চৈত্রপুর গ্রামে আমগাছে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলতে দেখা যায়। পুলিস দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠায়। তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়। তৃণমূলের অভিযোগ, কাটমানির টাকা উদ্ধারের নাম করে বিজেপির লোকজন তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে বর্ধমান থানা ঘেরাও করে তৃণমূল। ময়না তদন্তের পর মৃতদেহ রাস্তায় ফেলে শহরের কার্জন গেট এলাকায় রাস্তা অবরোধ করা হয় দলের তরফে। যদিও বিজেপির দাবি, ঘটনার সঙ্গে দলের কেউ জড়িত নয়। এটা কাটমানি খাওয়া ও টাকা দেওয়া লোকজনের মধ্যে ঘটনা। ঘটনার বিষয়ে মৃতের স্ত্রী সন্ধ্যা চট্টোপাধ্যায় পুলিসে অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পরিকল্পনামাফিক খুনের ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিস। মৃতার স্ত্রীর অভিযোগ, গত ২১ জুন তাঁদের বাড়িতে তারক সহ কয়েকজন চড়াও হয়। তাঁকে এবং তাঁর স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তাঁরা বাড়ি ছাড়েন। তাঁর স্বামী কলকাতার বেহালায় মেয়ের বাড়ি চলে যান। তিনি ছেলেকে নিয়ে শহরের নীলপুর এলাকায় বাপেরবাড়িতে চলে যান। মঙ্গলবার তিনি ফোন করে স্বামীকে বাড়িতে আসতে বলেন। সেদিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ফোনে স্বামীর কথা হয়। স্বামী ট্রেনে চেপেছেন বলে জানান। তারপর থেকে আর যোগাযোগ হয়নি। এরই মধ্যে তাঁদের বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেয় কয়েকজন। তাঁদের ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরেরদিন সকালে স্বামীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে বলে সন্ধ্যা দেবীর অভিযোগ। যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা খুনের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, কাটমানি ফেরত দেওয়ার চাপে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। কয়েকজন বাসিন্দা তাঁদের কাছ থেকে কাটমানি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগও করেছেন।