গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ের টোপ দিয়ে বিহারের মোজাফফরপুরের চাকএলাহাদাদ থেকে জাহানা খাতুনকে কলকাতায় আনে তার বাবা-মা। ভিন ধর্মের যুবকের সঙ্গে জাহানার প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি ছিল এলাকাবাসীর। এনিয়ে এলাকায় সালিশি সভা বসে। ভিন ধর্মের যুবকের সঙ্গে মেলামেশা করলে জাহানার পরিবারকে এলাকা ছাড়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় সালিশিতে। তা সত্বেও সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় মনোভাব দেখান জাহানা। একদিকে এলাকাবাসীর চাপ, অন্যদিকে জাহানার প্রেমিকের প্রতি অদম্য টান। দুইয়ের টানাপোড়েনে জাহানাকে মেরে দেওয়ার পরিকল্পনা করে তার দাদা মহম্মদ জাহিদ ও বাবা মহম্মদ মুস্তাফা। সেইমতো তাকে প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে কলকাতায় আনা হয়। তারপর পরিকল্পনামাফিক গাড়িতে চাপিয়ে তাকে জামালপুরে এনে খুন করা। হয়। পুরো বিষয়টি অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে। তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনার বিষয়ে বিন্দুমাত্র আঁচ পাননি জাহানা। সে কারণে বাবা ও দাদার গাড়িতে চেপে ঘুরতে বেরনোর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান তিনি। সরল বিশ্বাসে বাবার সঙ্গে দাদার অফিসের সুইফট ডিজায়ার গাড়ির পিছনে বসেছিলেন জাহানা। তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই নাইলনের দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে বাবা তাকে খুন করেন। শেষ মুহূর্তে অবশ্য বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন জাহানা। শরীরের কয়েকটি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখে মরার আগে বাধা দেওয়ার তত্ত্বের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে পুলিস।
তদন্তে পুলিস জেনেছে, ২০১৬ সাল থেকে জাহানার সঙ্গে প্রতিবেশী ওই যুবকের ভাব-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যদিও প্রথমে তার পরিবার বিষয়টি টের পায়নি। লেখাপড়া খুব একটা বেশিদূর করেন নি জাহানা। কর্মস্থল নাগপুর থেকে প্রেমিক দেশে ফিরলে তার সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করতেন জাহানা। বেশিরভাগ সময় মোবাইলে প্রেমিকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ প্রেমিকের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতেন তিনি। এতে তার পরিবারের লোকজনের মনে সন্দেহ জাগে। গত বছরের ঈদে দেশের বাড়িতে গিয়ে জাহানা কার সঙ্গে মোবাইলে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন তা জানতে চান তার বাবা ও দাদা। সদুত্তর না মেলায় জাহানার মোবাইলের সিম কেড়ে নিয়ে নিজের মোবাইলে ঢুকিয়ে নেন জাহিদ। জাহানার নম্বরে ফোন করলে প্রেমিকের পরিচয় জেনে ফেলে তার বাবা ও দাদা। এরপর বেশ কয়েকবার মোবাইলের নম্বর পরিবর্তন করেন জাহানা ও তার প্রেমিক। বেশ কয়েকবার প্রেমিকের ফোন নম্বর জাহানার মোবাইলে ব্লক করে দেন তার দাদা। বারবার প্রেমিকের নম্বর মনে রাখতে সমস্যা হত জাহানার। তাছাড়া, তাঁর ডায়েরি, খাতা ও বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি চালাত পরিবারের লোকজন। প্রেমিকের ফোন নম্বর যাতে কেউ জানতে না পারে সে জন্য তা ঊরুতে মেহেন্দি দিয়ে লিখে রেখেছিলেন জাহানা। তার এক আত্মীয় জাহানার ঊরুতে প্রেমিকের নাম ও ৫টি ফোন নম্বর লিখে দেন। সকলের নজর এড়িয়ে সেই নম্বর দেখে প্রেমিককে ফোন করতেন জাহানা।
পুলিস জাহানার বাবা ও দাদাকে গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় জাহানার মৃতদেহের ছবি প্রথমে শনাক্ত করেনি তারা। এমনকি জাহানাকে থানায় এনে হাজির করার কথা বলে পুলিসকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে বাবা ও দাদা। তাদের মুখোমুখি বসিয়ে টানা জেরা করে পুলিস। তাতেও তারা খুনের কথা শিকার না করায় শেষমেশ তুরুপের তাস হিসাবে জাহানার প্রেমিককে তাদের সামনে হাজির করে পুলিস। তিনজনকে মুখোমুখি বসিয়ে কিছুক্ষণের জেরাতেই কেল্লাফতে হয়। খুনের কথা স্বীকার করে নেয় জাহানার বাবা ও দাদা।
এদিকে বুধবার জাহানার প্রেমিকের গোপন জবানবন্দি নথিভূক্ত করার জন্য এদিন সিজেএম আদালতে আবেদন জানায় পুলিস। সেই আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর পঞ্চম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তার গোপন জবানবন্দি নথিভূক্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার বর্ধমান সংশোধনাগারে মুস্তাফা ও জাহিদের টিআই প্যারেড করানো হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেল সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম।
Check Also
বন্ধুর সঙ্গে পিৎজা খেতে বের হয়ে ধর্ষণের শিকার যুবতী, গ্রেপ্তার ৫
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বন্ধুর সঙ্গে পিৎজা খেতে বের হয়ে ধর্ষণের শিকার হলেন এক যুবতী। …