Breaking News

শিলাবৃষ্টিতে পূর্ব বর্ধমান জেলার বেশ কিছু ব্লকে ক্ষতির মুখে আলু চাষীরা

Potato damage in the hailstorm

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- আচমকা শিলাবৃষ্টির সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিতে রীতিমত পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে আলুপিঁয়াজ সহ বেশ কয়েকটি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা দেখা দিল। একইসঙ্গে সোমবার গভীর রাতে পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টির জেরে রীতিমত আতংক দেখা দিল কৃষক মহলে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছেজেলার ৪টি ব্লকে শিলাবৃষ্টির প্রকোপ ব্যাপকভাবেই পড়েছে। ফলে ওই ৪টি ব্লকে আলুপিঁয়াজআম ও সজনেতে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলা কৃষি দপ্তরের যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেনসোমবার গভীর রাতে পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারী ১ ও ২বর্ধমান সদর এবং কালনায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। প্রতিটি ব্লক কৃষি আধিকারিককে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কতটা ক্ষতি হয়েছে তা বলা সম্ভব নয়। এরই পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেনজেলার ২৩টি ব্লকের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্লকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির জল আলু জমিতে জমা রয়েছে। দ্রুত সেই জল বার করে দিতে না পারলে আলুর ব্যাপক ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানিয়েছেনচাষীদের এই জল দ্রুত বার করে দেবার আবেদন জানানো হয়েছে। অন্যদিকেসোমবার গভীর রাতে এই শিলাবৃষ্টির পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টির ঘটনায় রীতিমত মাথায় হাত পড়েছে চাষীদের। বর্ধমান সদর ২নং ব্লকের চাষী কাবুল সাঁতরা জানিয়েছেন,এবছর তাঁরা প্রায় আড়াই বিঘে জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। কিন্তু যেভাবে সোমবার শিলাবৃষ্টির সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে তাতে মাটির তলার আলু পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানিয়েছেনতাঁদের জমিতে আলু তুলতে এখনও প্রায় একমাস দেরী ছিল। এখনও আলু পোষ্টালো হয়নি। ফলে গোটা জমির আলুই এই জলে নষ্ট হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকেজানা গেছেচলতি বছরে আলুর উত্পাদন আশাতিরিক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারে আলুর দামও রীতিমত নিম্নমুখী। খোলাবাজারে আলু ৫ থেকে ৬ টাকা প্রতি কেজি বিকোচ্ছে। এমতবস্থায় এবছর আলু চাষ নিয়ে রীতিমত সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে চাষীদের। যদিও ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ১০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু সরকারীভাবে কেনার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ১০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু কেনা হলেও পরিস্থিতি মোটেই স্বাভাবিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন আলু ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবারই জেলার আলু ব্যবসায়ীদের একটি সম্মেলনও হয় বর্ধমান টাউন হলে। এব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক লালু মুখার্জ্জী জানিয়েছেনসরকার যে পরিমাণ আলু কিনতে চাইছেনতাতে সমস্যার সমাধান হবে না। বাংলার আলুকে বাইরে পাঠাতে না পারলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি জানিয়েছেন,গতবছর ২০১৮ সালে গোটা রাজ্যে আলুর উত্পাদন ছিল ৯০ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০১৭ সালে ছিল প্রায় এক লক্ষ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। তিনি জানিয়েছেনএবছর এখনও পর্যন্ত তাঁরা যা হিসাব পেয়েছেন তাতে গোটা রাজ্যে আলুর উত্পাদন হতে চলেছে ১ লক্ষ ১০ হাজার মেট্রিক টন। ফলে গোটা রাজ্যেই এবছর প্রত্যাশিত ফলনের থেকেও বেশি ফলন হওয়ার কথা। আর এর ফলেই আশংকা দেখা দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেনগতবছর যে আলু হিমঘরে মজুদ ছিল তার সবটা এখনও বার হয়নি। বাঁকুড়াতে ৬৭ হাজার প্যাকেট এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ১ লক্ষ ৭০ হাজার প্যাকেট আলু হিমঘরেই মজুদ রয়েছে। তিনি জানিয়েছেনরাজ্যে প্রায় ৫০০টি ছোটবড় হিমঘর রয়েছে। কিন্তু আলুর ধারণ ক্ষমতা ৭০ লক্ষ মেট্রিক টন। ফলে সমস্ত হিমঘরে আলু পূর্ণরূপে ভর্তি করে দিলেও উদ্বৃত্ত থাকবে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু। প্রতিদিন রাজ্যবাসীর খাওয়ার জন্য যে আলু প্রয়োজন হয় তা বাদ দিয়েও প্রচুর পরিমাণে আলু খোলা বাজারে পড়ে থাকবে। তিনি জানিয়েছেনএতাবতকাল তাঁরা আলুতে এলামাটি মিশিয়ে বাইরে পাঠাতেন। এই এলামাটি কোনো রাসায়নিক নয়। আলুর স্বাভাবিক রংকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু সরকারীভাবে এলা মাটি মেশানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ তাঁরা এই এলামাটি পরীক্ষা করিয়েছেন। তাতে কোনো রাসায়নিকের হদিশ মেলেনি। এব্যাপারে ওই রিপোর্ট তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেনএই নিষেধাজ্ঞার জেরেই তাঁরা বাইরে আলু পাঠাতে পারছেন না। কারণ বাংলার আলুর রং ঠিক না থাকায় বাইরের রাজ্য তা কিনতে চাইছে না। লালু মুখার্জ্জী জানিয়েছেনগতবছর আলুর উত্পাদন কম হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল। তাই গতবার ৫০০ টাকা দরে আলুর প্যাকেট হিমঘরে মজুদ করা হয়েছিল। সেখানে উত্তরপ্রদেশ ৪০০ টাকা দরে মজুদ করেছিল। অথচ আলু বিক্রির সময় প্রত্যাশিত দাম পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি বিহারঝাড়খণ্ডআসাম প্রভৃতি যে সমস্ত রাজ্য অন্য রাজ্য থেকে আলু কেনে তাঁরা দাম কম থাকা এবং আলুর রং ও দেখতে ভাল থাকায় উত্তরপ্রদেশ থেকেই বেশির ভাগ আলু সংগ্রহ করে। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলু রপ্তানি করা যায়নি। তিনি জানিয়েছেনসরকারীভাবে আলু কিনলেই হবে না। রপ্তানির জন্যও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। নাহলে এবারেও আলু নিয়ে কেলেংকারী হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

About admin

Check Also

The fifth short film festival was organized in Burdwan

বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *