বর্ধমান, ৮ ফেব্রুয়ারিঃ- আমানতকারীদের জমারাখা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি বেসরকারি সংস্থার ট্রেজারারকে গ্রেপ্তার করেছে বর্ধমান থানার পুলিশ। ধৃতের নাম উৎপল বিশ্বাস। বর্ধমান শহরের বাবুরবাগ শান্তি কলোনি এলাকায় ধৃতের বাড়ি। শুক্রবার ভোরে বাড়ি থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিনই ধৃতকে বর্ধমানের সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। আমানতকারীদের কয়েক কোটি টাকা সে এবং সংস্থার আরও কয়েকজন মিলে আত্মসাত করেছে বলে ধরা পড়ার পর জেরায় ধৃত স্বীকার করেছে। লোপাট করা টাকা বিভিন্ন ব্যাঙ্কে জমা রাখা হয়েছে বলে পুলিশকে সে জানিয়েছে। টাকার হদিশ পেতে এবং অভিযুক্ত সংস্থার বাকি কর্মকর্তাদের ধরতে ধৃতকে ৭ দিন পুলিশি হেপাজতে নেওয়ার আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার। সিজেএম সেলিম আহমেদ আনসারি ধৃতকে ৫ দিন পুলিশি হেপাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১১ সালে উৎপল সহ সংস্থার আরও কয়েকজন কর্তা বর্ধমান শহরের মুচিপাড়ার বাসিন্দা শুভময় বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করে। ব্যাঙ্কের চেয়ে বেশি সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংস্থায় টাকা জমা রাখার জন্য তাঁকে বলে। প্রথমে রাজি না হলেও বিস্তর চাপাচাপির পর সেই বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ৪৫ হাজার টাকা সংস্থাটিতে জমা করেন। পরিবর্তে সংস্থার তরফে তাঁকে সেয়ারের শংসাপত্র দেওয়া হয়। তাতে মেয়াদান্তে তাঁকে ৪৯ হাজার ৯৫০ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
টাকা জমা দেওয়ার কিছুদিন পর তিনি সংস্থাটির গোলাপবাগ এলাকার অফিসে গিয়ে খোঁজখবর নেন। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, সংস্থায় তাঁর নামে কোনও টাকাই উৎপল জমা দেয়নি। যদিও সংস্থার তরফে তাঁকে মীমাংসার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিছুদিন আগে তিনি ফের এনিয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে দেখেন, সংস্থাটির অফিসে তালা ঝুলছে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, মাস দুয়েক আগেই সংস্থাটি পাততাড়ি গুটিয়েছে। এদিকে, আমানতকারীদের বিভ্রান্ত এবং নিজেকে বাঁচাতে গত ৩১ জানুয়ারি বর্ধমান থানায় সংস্থারই কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে উৎপল। তাতে নিজেকে সংস্থার এজেন্ট পরিচয় দিয়ে সে অভিযোগ করে, তার মাধ্যমে সংস্থাটিতে জমা রাখা টাকার পরিমাণ ৫০ লক্ষ টাকা। কোনও কাজ না পেয়ে মোটা টাকা কমিশন পাওয়ার লোভে সে এবং তারমতো আরও কয়েকজন সংস্থাটিতে এজেন্ট হিসেবে যোগ দেয়। সংস্থাটিতে তারা বহু টাকা জমা করিয়েছে। কিন্তু, সংস্থাটির কর্মকর্তারা আমানতকারীদের টাকা আত্মসাত করে অফিসে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে। যদিও পুলিশের অনুমান, সংস্থার অন্যান্যদের সঙ্গে সেও টাকা আত্মসাতে জড়িত। টাকা ফেরত না পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে শুভময় বাবু বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
বর্ধমান সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সেবি -র অনুমতি ছাড়াই বহু সংস্থা আমানত সংগ্রহ করছে। আমানতকারীদের টাকা লোপাট করার অভিযোগ রয়েছে বেশ কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে। বেশি সুদ পাওয়ার আশায় এধরনের সংস্থায় টাকা জমা রেখে বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। তা সত্ত্বেও সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন প্রশাসন। এনিয়ে প্রতারিতরা ক্ষুদ্ধ। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা বলেন, অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই অভিযুক্তকে ধরা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদেরও ধরা হবে।