বর্ধমান, ১১ মার্চঃ- শিলান্যাসের আগেই বর্ধমানে প্রস্তাবিত মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রের ভবন নির্মাণের জমি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। জায়গাটি তাদের বলে দাবি করেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবিত জায়গায় শিলান্যাস অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার পূর্ত দপ্তরের কর্মীরা প্রস্তাবিত জায়গায় শিলান্যাস অনুষ্ঠানের জন্য শিলা বসাতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা তাতে বাধা দেয়। তাতে সাময়িক পিছু হটেন পূর্ত দপ্তরের কর্মীরা। এনিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে বর্ধমান থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মীদের জোর করে সেখান থেকে হটিয়ে দেয়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে শিলা বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার এবং মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধিকে নিয়ে অফিসে বৈঠক করেন জেলাশাসক। জেলা শাসক ওঙ্কার সিং মীনা বলেন, জায়গা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। প্রস্তাবিত জায়গাতেই শিলান্যাস অনুষ্ঠান হবে।
মেডিকেল কলেজ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে বর্ধমানে এসে মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র তৈরীর কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রটি তৈরি হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এই ঘোষণার পরই জমির খোঁজে নেমে পড়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাতের কাছেই জমি মিলে যায়। বর্ধমান নার্সিং ট্রেনিং কলেজের উলটো দিকের জলা জমিটিকেই কেন্দ্রের ভবন নির্মাণের জন্য বাছা হয়। ওই জায়গাটিতেই কয়েক বছর আগে ট্রমা ইউনিট গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। পরে নানা কারণে ওই জায়গায় ট্রমা ইউনিট তৈরির পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। জলা জায়গাটি দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে রয়েছে। কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জায়গাটি তার কাঁটা দিয়ে ঘিরে দেয়। জায়গাটি সংরক্ষিত এলাকা বলে বোর্ডও ঝুলিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কয়েকদিন আগে তার কাঁটা কেটে জায়গাটি পরিষ্কার করে পূর্ত দপ্তরের লোকজন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে উচ্চশিক্ষা দপ্তর জায়গাটি মেডিকেল কলেজের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাগজে কলমে সেই জমি হস্তান্তর করেনি। উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নির্দেশের ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বি এল আর ও দপ্তরে মিউটেশনের আবেদন করে। তাতে আপত্তি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, সেই আপত্তিতে আমল দেয়নি বি এল আর ও দপ্তর। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ডি এল আর ও দপ্তরের দ্বারস্থ হয়। সেখানেও প্রত্যাশিত ফল না মেলায় রাজ্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই আবেদন এখন বিচারাধীন। তার মাঝেই বিতর্কিত জায়গাতেই মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাব গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর এতেই আপত্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। বর্ধমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায় বলেন, জায়গাটি আমাদের। কিছু লোক শিলা লাগানোর কাজে বাধা দেয়। তাদের পরিচয় আমার জানা নেই। বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ বাধাদানকারীদের হটিয়ে দিয়ে শিলা লাগানোর ব্যবস্থা করে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ স্মৃতি কুমার সরকার বলেন, বেশি দিন দায়িত্বে আসিনি। জায়গাটি কার তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তাই এনিয়ে এর বেশি কিছু বলতে পারছিনা।
প্রসঙ্গতঃ আগামী কালকের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রী মলয় ঘটক এবং ক্ষুদ্র ও ছোট উদ্যোগ ও বস্ত্র এবং ভূমি দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের নাম থাকলেও এলাকার বিধায়ক তথা বিজ্ঞান ও কারিগরি দপ্তরের মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের নাম নেই।