খণ্ডঘোষ (পূর্ব বর্ধমান) :- একদিকে যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে খোদ বঙ্গবন্ধুর সমস্ত স্মৃতিকে, এমনকি ধানমণ্ডি ৩২-এর স্মৃতিকেও উপড়ে ফেলা হয়েছে সেই সময় খোদ পূর্ব বর্ধমানে জ্বলজ্বল করে চলছে বঙ্গবন্ধুর নামে মিষ্টির দোকান। মুজিবুর রহমান খান প্রায় ২৪-২৫ বছর আগে খণ্ডঘোষের আড়াডাঙ্গায় এই দোকানটা তৈরি করেন এবং নাম রাখেন ‘বঙ্গবন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। দোকানটা তৈরি করে তাঁর বাবা নজরুল হক খানকে চালাতে দেন। নজরুল হক খান জানিয়েছেন, তাঁর বাবা অর্থাৎ মুজিবুর রহমান খানের ঠাকুরদা এসা হক খান কংগ্রেস করতেন। গ্রামে তাঁদের বাড়িতেই রেডিও ছিল। এলাকার অনেকেই রেডিও শুনতে আসতেন। সেই সময় রেডিওতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য শুনতে এবং তাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে শুনতে পরিবারের সবার ভালো লাগতো। ভারতের সাথেও তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল। তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে একটা আলাদা শ্রদ্ধা-ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। নজরুল খানের প্রথম সন্তান হওয়ার পর এই শ্রদ্ধা-ভালোবাসাকে গুরুত্ব দিয়ে এক ধর্মগুরুর পরামর্শে নাম রাখেন মুজিবুর রহমান খান। প্রথমে মুজিবুর রহমান খান আড়াডাঙ্গা থেকে কিছুটা দূরেই খেজুরহাটি বাজারে জুয়েলারির দোকান তৈরি করেন। কিছুদিন পরে তাঁর বাবা নজরুল খানের জন্য আড়াডাঙ্গা বাসস্টপেজে তৈরি করেন এই মিষ্টির দোকান। তাঁদের কাছে নায়কের আসনে বসে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দোকানের নাম দেন ‘বঙ্গবন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। তাঁর ভাই মনিরুল হকও বাবার সাথে মিষ্টির দোকানটা চালাতেন। একসময় রমরমিয়ে চলেছে এই মিষ্টির দোকান। এখন নানা কারণে মিষ্টির বিক্রি অনেকটাই কমেছে। তাই মিষ্টির পাশাপাশি দোকানে পাওয়া যায় মুদিখানার বেশ কিছু সামগ্রী। মুজিবুর রহমান খানের জুয়েলারির ব্যবসায় কিছু সমস্যা হওয়ায় এখন তিনি কর্মসূত্রে ১০ বছর উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌয় থাকেন। সেখানেও তিনি জুয়েলারি ব্যবসার সাথেই যুক্ত। নজরুল খান জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে কেউ কেউ দোকানের নামটা পরিবর্তন করে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। হয়ত তাঁরা মজার ছলেই বলছেন। কিন্তু এতে তিনি কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন। ভারত সরকার তো কিছু নির্দেশ দেয়নি। তাই তাঁদের নাম পরিবর্তনের ইচ্ছে নেই, কিন্তু তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে বঙ্গবন্ধু নামটা না থাকলেও তাঁর কোনও সৃষ্টি বা কর্মকাণ্ডের নামেই রাখতে চান এই মিষ্টির দোকানের নাম। তিনিও চান দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভালো কাজ করে গেছেন। তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা হয়ত চলার পথে ভুল করেছেন তাঁর জন্য ভেঙে দেওয়াটা সমর্থন করা যায় না। নজরুল খান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে এই দেশে পড়াশোনার জন্য বা পর্যটক হিসাবে আসা অনেকেই তাঁদের এই দোকানের কথা জেনে দেখতে আসেন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে তাঁদের এই দোকানের খবর।
খোদ মুজিবুর রহমান খান জানিয়েছেন, দেশবন্ধু, নেতাজি বিভিন্ন দেশনায়কদের নামে বর্ধমানে দোকান আছে। সেখান থেকেই মনে হয়েছিল দোকানের নাম বঙ্গবন্ধুর নামে করা যেতেই পারে। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের অনুকরনেই তাঁরও নিজের নাম। মিষ্টির দোকানটা ২০০০ সালে তৈরি করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে মুজিবের স্মৃতি মুছে দেওয়া হচ্ছে এটা খুব খারাপ লাগছে। যারা অতীতে সোনার বাংলাদেশ তৈরি করেছেন। তখন সবাই প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। এখন তাঁর মূর্তি ভাঙ্গা হচ্ছে, তাঁর নামে কুৎসা রটনা করা হচ্ছে এই জিনিসগুলো শোভনীয় নয়। দীর্ঘদিন সরকার চালিয়েছেন, তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনাও দীর্ঘদিন সরকার চালিয়েছেন। এতদিন তো ভালোই সুনাম ছিল। এক মানুষ সবার কাছে ভালো হয় না, এক সরকারও সবার কাছে ভালো হয় না। বিরোধী থাকবে। বিরোধী শক্তি হয়ত এখন একটু ভালো হয়েছে। সেই জন্যই হয়ত এখন এই অবস্থা হয়েছে। হয়ত সুদীন আগামী দিনে ফিরে আসবে। ইতিহাস মুছে দেওয়াটা বাঞ্ছনীয় নয়। যেকোনও সরকারেরই চলার পথে ভুল থাকতে পারে, জনগণকে তাঁকে শোধরানোর সুযোগও দিতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, স্কুলে পড়ার সময় তাঁকে অনেকেই ‘বঙ্গবন্ধু’ বলে ডাকতেন। তিনি কিছু বুঝতেন না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরে যখন তাঁর বোধশক্তি আসে তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু জীবনী পড়েন, মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে পারেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা জানতে পারেন। পরবর্তী সময়ে যখন গ্রামের বাজারে বাবার জন্য একটি মিষ্টির দোকান তৈরি করা হয়, সেই দোকানের নাম রাখেন ‘বঙ্গবন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। কারণ শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ গড়ার পিছনে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।
তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ভারতে তাঁদের কোনও প্রভাব পরে নি। তাই এই নাম রাখা নিয়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম ভূমিকা ছিল। তাঁর নামে অনেক স্মৃতি রয়েছে। সেই সব স্মৃতি বর্তমানে বিকৃত করা হচ্ছে, মুছে দেওয়া হচ্ছে। এটা একদমই কাম্য নয়। ইতিহাসকে মুছে দেওয়া বা বিকৃত করে দেওয়া একদমই উচিত নয়। তিনি যেভাবে দেশ পরিচালনা করেছেন, তিনি মানুষের মনকে জয় করেছেন তার জন্যই তো তাঁর নাম ‘বঙ্গবন্ধু’ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ের সরকারের কিছু ভুল ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে তার সাজা ‘বঙ্গবন্ধু’-র উপর বর্ষিত হওয়া ঠিক নয়। বাংলাদেশে যে সরকারই থাক সেটা জনমুখী সরকার হোক। মানুষের জন্য কাজ করুক। নির্বাচিত সুশৃঙ্খল সরকার প্রতিষ্ঠা পাক এই কামনা করি। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর নাম মুজিবুর রহমান হওয়ায় তিনি খুব খুশি, এই নাম তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। লক্ষ্ণৌতেও অনেকে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ বা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন। বঙ্গবন্ধুর মতো তিনি হতে না পারলেও এই সম্বোধন তাঁর শুনতে ভালোই লাগে বলে জানিয়েছেন মুজিবুর রহমান খান।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁদের দেশ নায়কের নামে ভারতের একটি দোকানের নাম হওয়ায় তাঁরাও গর্ব বোধ করছেন।
খন্ডঘোষ ব্লকের বাসিন্দা তথা পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের অধ্যক্ষ মহম্মদ অপার্থিব ইসলাম (ফাগুন) জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ শান্তি ও সম্প্রীতির পীঠস্থান। এখানে কেউ তাঁর দোকানের নাম স্বাধীন ভাবেই রাখতে পারেন। কেউ তাঁর মনের মানুষ, প্রিয় মানুষ ‘বঙ্গবন্ধু’-র নামে দোকানের নাম রাখতেই পারেন। সেটা তাঁর স্বাধীনতা আছে। এখানে ওই বিষয় নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। যদি কেউ সমস্যা করতে চান প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
Tags Awami League Bangabandhu Bangabandhu Mistanna Bhandar Bangabandhu Mujibur Rahman Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Bangabandhu Sweets Bangabandhu Sweets Store Bangladesh Bangladesh Awami League Bangladesh Independence Bangladesh Liberation War Bangladesh Muktijuddho Bangladesh Politics Bangladesh Prime Minister Burdwan Dhanmondi Dhanmondi 32 Hasina Independence of Bangladesh India Khandaghosh Liberation War Mujib Mujibur Rahman Muktijuddho Purba Bardhaman Sheikh Hasina Sheikh Mujibur Sheikh Mujibur Rahman West Bengal আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ মুজিব মুজিবুর রহমান শেখ মুজিবুর রহমান শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ হাসিনা
Check Also
নয়াদিল্লী স্টেশনে পদপিষ্টের ঘটনায় অতিরিক্ত যাত্রীচাপকেই দায়ী করলেন সুকান্ত, দিলীপ
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- নয়াদিল্লী স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় অতিরিক্ত যাত্রীর চাপকেই …