বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ১৮ তম লোকসভা নির্বাচনের নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই আদর্শ আচরণ বিধি লাগু হয়ে গেল গোটা দেশ জুড়ে। শনিবার ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা আগেই বর্ধমান শহর জুড়ে নির্বাচন দপ্তরের পক্ষ থেকে সরিয়ে ফেলা হলো বিভিন্ন রাজনৈতিক পতাকা,ফেস্টুন ও হোর্ডিং। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত প্রশাসনিক ব্যানার ও হোর্ডিং ও সরিয়ে ফেলা হল। আগামী ১৩ মে ৪র্থ দফায় বর্ধমান-দুর্গাপুর এবং বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে ভোট হতে চলেছে। ওইদিনই বোলপুর লোকসভার অধীন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম এবং মঙ্গলকোট বিধানসভা এলাকার ভোটাররাও ভোট দেবেন। যদিও বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীন পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ বিধানসভা এলাকার ভোটাররা ভোট দেবেন ষষ্ঠ দফায় ২৫ মে। এদিকে, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ভোট ঘোষণার পর পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিধানচন্দ্র রায় এবং জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ সাংবাদিক বৈঠক করেন। জেলাশাসক জানিয়েছেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্ণ ও আংশিক ৪ টি লোকসভা কেন্দ্রে এবছরের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার রয়েছেন ৪১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮২৯ জন। যার মধ্যে রয়েছেন পুরুষ ভোটার ২০ লক্ষ ৯১ হাজার ৬৪ জন এবং মহিলা ভোটার রয়েছেন ২০ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৭৮ জন। তৃতীয় লিঙ্গের মোট ভোটার রয়েছেন ৮৭ জন। মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪৫০৬টি। মহিলা দ্বারা পরিচালিত বুথ থাকছে ৪৫১ টি। এদিন জেলাশাসক জানিয়েছেন, এবারই প্রথম জেলায় বিশেষভাবে সক্ষম ভোট কর্মীদের নিয়ে একটি বুথ করা হচ্ছে। বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা এলাকার ১ নম্বর পোলিং স্টেশনকে এই বুথ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলাশাসক বিধানচন্দ্র রায় জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় ফর্ম ৬ আবেদনপত্র জমা পড়েছে ৯৫৫২ টি, এরমধ্যে গ্রহণ হয়েছে ৬১০৭ টি, বাতিল হয়েছে ২২৮৬ টি ও পেন্ডিং আছে ১১৫৯ টি। ফর্ম ৭ আবেদনপত্র জমা পড়েছে ১৪০৯৫ টি, এরমধ্যে গ্রহণ হয়েছে ১১০৪১ টি, বাতিল হয়েছে ১১৬৭ টি ও পেন্ডিং আছে ১৮৮৭ টি। ফর্ম ৮ আবেদনপত্র জমা পড়েছে ৪২৫৯৬ টি, এরমধ্যে গ্রহণ হয়েছে ৩২৫২৭ টি, বাতিল হয়েছে ৪৭৫১ টি ও পেন্ডিং আছে ৫৩১৮ টি।
জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, ভারনাবিলিটি, ক্রিটিক্যাল ব্যক্তি বা এলাকা চিহ্নিত করা ডায়নামিক প্রসেস। এটা চিহ্নিত করার কাজ চলতেই থাকে। ৬ মাস আগে অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকেই জেলা জুড়ে মনিটরিং চলছে। ২০১৯, ২০২১ সালের নির্বাচন এবং ২০২২-২০২৩ সালের রাজনৈতিক গন্ডগোলকে বিচার করে এখনও পর্যন্ত ৩৫০ টি বুথ এবং ৬৫০ জন ব্যক্তি চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ৩৫০ টি জায়গায় ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে রুট মার্চ করানো হয়েছে। সাধারণ মানুষজনের সাথে কথা বলা হয়েছে, চিহ্নিত ব্যক্তিদেরও সতর্ক করা হয়েছে। এই সময়ে ৫০ টি অস্ত্র, ১০০ টি বোমা উদ্ধার হয়েছে। ৩২৮ টি কেসে ১৬ হাজার লিটার বেআইনি মদ উদ্ধার হয়েছে। পাচারের সময় ভাতার থানা এলাকায় প্রায় ২ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। প্রিভেন্টিভ অ্যাকশন হিসেবে ৫০০০ জনের বিরুদ্ধে ২০০০-এর বেশি প্রসিকিউশন কাটা হয়েছে। শেষ ৩ মাসে ৩০০০-এর বেশি ওয়ারেন্ট কার্যকর করা হয়েছে। এখনও ৯২৭ টি ওয়ারেন্ট কার্যকর করা বাকি আছে। বাইরের রাজ্য থেকেও ওয়ারেন্ট থাকা ব্যক্তিদের ধরে আনা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। প্রত্যেক মহকুমায় ১ কোম্পানি করে।
ভোট গ্রহণের দিনের আগেই প্রত্যেক ভার্নারেবল এলাকায় ৩ বার করে রুট মার্চ করা হবে। বাকি সব বুথেও অন্তত একবার রুট মার্চ করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। জেলায় আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে বলে জানিয়েছেন পুলিশসুপার। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসকরা, জেলা নির্বাচন আধিকারিক, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিকও।
Check Also
বাংলা আবাস যোজনায় নাম দোতলা বাড়ির মালিক বিধায়কের শাশুড়ি এবং পঞ্চায়েত প্রধানের
খণ্ডঘোষ (পূর্ব বর্ধমান) :- পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়ির একাধিক বাড়িতে হুকিং …