বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী তথা জেলার ভূমিপুত্র পরেশচন্দ্র দাস। দীর্ঘ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে তাঁর নাম ঘোষণার পর থেকেই রীতিমত উজ্জীবিত গেরুয়া শিবির। কাটোয়া মহকুমার মঙ্গলকোটের কৈচড় গ্রামের বাসিন্দা পরেশবাবুর শিশুকাল থেকে কলেজ পর্যন্ত কেটেছে রীতিমত আর্থিক অনটনের মধ্যেই। কার্যত গরীব কথার অর্থ তিনি হাড়েহাড়েই জানেন। তাই ভোটের লড়াইয়ে নেমে তাঁর একমাত্র লক্ষ বেকারত্ব হঠাও, গরীবী হঠাও। আজ শনিবার তিনি দিল্লী থেকে কলকাতায় বৈঠক সেরে নিজের লড়াইয়ের ভূমিতে পা রাখতে চলেছেন। শনিবার কলকাতায় দলীয় বৈঠক সেরেই তিনি সরাসরি পৌঁছে যাবেন তাঁর লোকসভা এলাকা কালনা শহরে। সেখানে দলীয় প্রথম বৈঠক সেরেই তিনি যাবেন কৈচড়ে। যেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন পরেশবাবুর মা আশালতা দাস। রবিবার থেকে তিনি কোমড় বেঁধেই ভোটের লড়াইয়ে নামতে চলেছেন বলে জানিয়েছেন। শুক্রবার দিল্লী থেকেই তিনি টেলিফোনে জানিয়েছেন, তাঁর ইচ্ছা ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদীকে তিনি তাঁর কেন্দ্রে আনতে চান। ইতিমধ্যেই সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তাঁর হয়ে প্রচারে আসবেন অমিতশাহ সহ কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা ও মন্ত্রী। পরেশবাবু জানিয়েছেন, তাঁর বাবা ছিলেন দিনমজুর। অভাবে দিন কেটেছে তাঁদের। অভাবটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। আর তাই তিনি এই অভাবকেই দূর করতে চান তাঁর এলাকায়। আর সেই লক্ষ্যেই তিনি জিততে চান। উল্লেখ্য, বিজেপির এই প্রার্থী পরেশবাবু কাটোয়ার মাথরুন নবীনচন্দ্র বিদ্যায়তনের ছাত্র ছিলেন। কাটোয়া কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স করার পর দিল্লীর জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটি থেকে এম এ এবং এম ফিল করেন। এরপর বিদেশ থেকে অর্থনীতি নিয়ে দীর্ঘ পড়াশোনা করেন। ১৯৮৭ সালে আইএএস পরীক্ষা দিয়ে ১৯৮৮ ব্যাচে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরীতে যোগ দেন। ৩১ বছর দেশের ১৮টি মন্ত্রণালয়ে চাকরি জীবন পার করে ২০১৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন সামাজিক ন্যায় এবং আধিকারিক মন্ত্রণালয় থেকে। এরপরেই কৈলাশ বিজয়বর্গীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে কালনায় এক অনুষ্ঠানে। তারপর থেকে বর্ধমান পূর্ব জেলায় সংগঠনের কাজ করেছেন। কাজ করেছেন আরএসএসেরও। বিকলাঙ্গ বা দিবাঙ্গদের নিয়ে ইংরাজীতে বই লিখেছেন ইয়েস উই ক্যান নামে। গত ৬ জানুয়ারী ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এভিসনারি অফ ইণ্ডিয়া নামে ৩টি ভাগে বই লিখেছেন। কার্যত মোদিজীর অন্ধ ভক্ত পরেশবাবু জানিয়েছেন মোদিজীই তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন ২০১৪–এর পর থেকে। একইসঙ্গে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের লেখা একাত্ম মানববাদ তাঁকে আরও অনুপ্রাণিত করে। বর্তমানে দিল্লীতে সিআর পার্কের বাসিন্দা তিনি। পরেশবাবু জানিয়েছেন, দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরেই তিনি ভারত সরকারের অর্থনীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রথম কাজ কেন্দ্রীয় সরকারের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পকে মানুষের কাছে পৌঁছানো। বেকারত্ব দূর করা। আর্থিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের উন্নতি ঘটানো। তিনি জানিয়েছেন, বাংলার যে কৃষ্টি, সংস্কৃতি তাকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবেন তিনি। হিংসাকে দূর করার চেষ্টা করবেন। প্রেম, ভালোবাসাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবেন। প্রসঙ্গত, তিনি জানিয়েছেন, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাটোয়ায় তাঁকে হেনস্থা করা হয়। সেই অভিজ্ঞতা তাঁর আছে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে এবার আধা সামরিকবাহিনী থাকবে। মানুষ প্রতিরোধ, প্রতিবাদ করবে। বাংলায় আমলারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ১৯৮৯ সালে মুসৌরীতে একসঙ্গে তিনি ট্রেনিং করেছেন। ওঁকে ভালভাবে জানি। বাংলায় ইনষ্টিটিউশনাল ডিগ্রেডেশন করার চেষ্টা হচ্ছে। ১৯৯৩ –১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বাংলায় আমলা হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন,সবাই পরাধীনভাবে কাজ করেন না। অনেকেই স্বাধীনভাবে কাজ করেন। আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে পরেশবাবু জানিয়েছেন, তাঁর প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেসের সুনীল মণ্ডল এবং সিপিএমের ঈশ্বরচন্দ্র দাসকে তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী প্রতিপক্ষ বলেই মনে করছেন। কিন্তু তিনিও চেষ্টা চালাবেন। তাই ছোট মিটিং, মিছিল, বাড়ির দরজায় দরজায় ভোটের জন্য প্রার্থনার পাশাপাশি তিনি বড় বড় বেশ কয়েকটি মিটিং করবেন।
Tags Bardhaman Purba Parliamentary Constituency BJP Parliament Election Parliament Election 2019
Check Also
বর্ধমান টাউন হলে শুরু হলো লিটল ম্যাগাজিন মেলা, চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শুক্রবার থেকে শুরু হলো ‘বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০২৪’। বর্ধমান টাউন …