বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পক্ষে ইন্সপেকশন রিপোর্ট করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার অভিযোগে সিবিআই-এর দুর্নীতি দমন শাখা গ্রেপ্তার করল ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশনের পরিদর্শক তথা মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান ডক্টর তপন কুমার জানা-কে। গ্রেফতার করল সিবিআই-এর দুর্নীতি দমন শাখা। এই ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে গোটা বর্ধমান জেলা জুড়ে। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় মেডিকেল কমিশনের পক্ষ থেকে ডাক্তার তপন কুমার জানা কর্ণাটকের বেলগাভি এলাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পরিদর্শনে যান। সেখানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পক্ষে ইন্সপেকশন রিপোর্ট দেওয়ার বিনিময়ে ডক্টর তপন কুমার জানা ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ হিসেবে নেন বলে অভিযোগ।অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে ডক্টর তপন কুমার জানা-কে সিবিআই নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং পরে শনিবার রাত্রি প্রায় সাড়ে দশটা থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ডক্টর তপন কুমার জানা-র বর্ধমান শহরের মিঠাপুকুর হাতিশাল এলাকায় থাকা বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালায় সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার পাঁচ সদস্যের একটি দল। তল্লাশিতে ডক্টর তপন কুমার জানার বাড়ি থেকে নগদ ৪৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা সহ আরও বেশ কিছু নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গেছে। ডা. জানাকে গ্রেপ্তার করে রবিবার কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হয়েছে। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ মে এই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি অভিযোগ আসে সি বি আইয়ের কাছে। অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। এই দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে ডা. তপন কুমার জানা ছাড়া আরও দুজনের বিরুদ্ধে। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ওই বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে তাদের অনুকূলে রিপোর্ট দেবার জন্য ডা. জানা ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ চায়। এরপরই সিবিআই ফাঁদ পাতে। আর এই ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিতেই হাতেনাতে ডা. জানাকে ধরে সিবিআই। তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর শনিবার রাতে আচমকাই ডা. জানার বাড়িতে হানা দেয় সিবিআইয়ের দল। হানা চালানো হয় ডা. জানার বাড়ি ছাড়াও তাঁর কর্মস্থল এবং অপর দুই ব্যক্তির বাড়ি ও অফিসেও। হানা চালানো হয় কলকাতা, বেলগাঁও এবং বর্ধমানে। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত থেকে ডা. জানার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মোট ৪৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই দুর্নীতিতে অভিযান চালিয়ে মোট ৫৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, শনিবার রাত ডা. তপন কুমার জানার বাড়িতে হানা দেওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা জানা বাড়িতে ছিলেন। ডা. সুস্মিতা জানা বর্তমানে আরামবাগ মেডিকেল কলেজের রেডিওলজিষ্ট হিসাবে কর্মরত। সিবিআই হানাদারির ঘটনা তিনি স্বীকার করেছেন। জানিয়েছেন, ৫-৬জনের টিম এসেছিলেন। তাঁদের কাছে বাড়ি সার্চ করার কাগজপত্র ছিল। সারারাত ধরে তাঁরা সার্চ করেছেন। সিবিআই কি কি বাজেয়াপ্ত করেছে সে ব্যাপারে ডা. সুস্মিতা জানা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁকে কিছু বলতে নিষেধ করা হয়েছে। এদিকে, বর্ধমানে ডা. জানার বাড়িতে সিবিআই হানাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ডাক্তারবাবুকে তাঁরা ভাল মানুষ বলেই জানতেন। কিন্তু এরকম ঘটনার সঙ্গে যে তিনি যুক্ত তা ভাবতে অবাক হচ্ছেন তাঁরা। শুধু এটাই নয়, এই হানাদারি নিয়ে রীতিমতো গুজবও ছড়াচ্ছে। কিডনি পাচার চক্রের সঙ্গে ডা. জানার জড়িত থাকার গুজব হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি তাঁর বাড়ি থেকে প্রচুর হিরে সহ মূল্যবান রত্ন পাওয়া গেছে বলেও রটে যায়। যদিও এই প্রসঙ্গে সিবিআই বা ডা. জানার স্ত্রী সুস্মিতা জানা কোনো কিছুই জানান নি।
Tags Burdwan Doctor CBI Central Bureau of Investigation Medical College Medical Commission National Medical Commission NMC Private Medical College
Check Also
১৮ বছরের তরুণীর পেট থেকে বের হল হাজারেরও বেশি বেলুনের ন্যায় তরলপূর্ণ সিস্ট
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- এক তরুণীর পেট থেকে বের হল হাজারেরও বেশী বেলুনের ন্যায় তরলপূর্ণ …