গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মেমারি (পূর্ব বর্ধমান) :- কালনা মহকুমা থেকে মেমারী একের পর সিরিয়াল কিলিং-এর ঘটনায় এবার নড়েচড়ে বসল জেলা পুলিশ। বুধবারই ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে মেমরী থানা ঘুরে গেলেন বর্ধমান রেঞ্জের ডিআইজি তন্ময় রায় চৌধুরী। ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ও। চলতি বছরের ২ জানুয়ারী কালনার উপলতি গ্রামে মিটার রিডিং দেখার নাম করে বাড়িতে ঢুকে এক লক্ষ্মীবালা পাল নামে বৃদ্ধাকে গলায় শেকল পেঁচিয়ে খুনের চেষ্টা করে দুষ্কৃতি। বৃদ্ধার গহনা লুঠে করে পালায় দুষ্কৃতি। ঘটনার তদন্তে নামে কালনা থানার পুলিশ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এই ঘটনার ৬ দিনের মাথায় একইভাবে কালনার আনুখালা গ্রামে খুন হন পুষ্প দাস নামে এক বৃদ্ধা। গত ৩১ মার্চ কালনা থানার হাটকালনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধর্মডাঙা গ্রামে ফের বাড়ির বিদ্যুতের মিটার রিডিং নেওয়ার নাম করে বাড়িতে ঢুকে ইতি মণ্ডল নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা চালায় দুষ্কৃতী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে । আর কালনার এই ঘটনার পর এবার খোদ মঙ্গলবার মেমারী থানা এলাকার সেগুনবাগান এবং বড়া গ্রামে প্রায় একই সময়ে দুই মহিলার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসল জেলা পুলিশ প্রশাসন। যদিও মেমারিতে জোড়া খুনের ঘটনার সঙ্গে চেন কিলারদের সম্পর্ক নেই বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান পুলিসের। দু’টি খুনের পিছনে কোনও শত্রুতা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিস। বুধবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের পুলিস মরগে দু’টি মৃতদেহের ময়না তদন্ত করা হয়। তাতে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ভারি কিছু দিয়ে মাথার পিছনে আঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুই প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়েছে। তবে, ময়না তদন্তের পুরো রিপোর্ট না মেলা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চায় না পুলিস। জোড়া খুনের ঘটনায় জেলার উচ্চ পদস্থ পুলিস কর্তারা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন। তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে তাঁরা প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিয়েছে। বড়া গ্রামের ঘটনাস্থলটি ঘিরে রাখা হয়েছে। সেখানে সিভিক ভলান্টিয়াররা পাহাড়া দিচ্ছেন। বুধবার দুপুরে মেমারি থানায় আসেন বর্ধমান রেঞ্জের ডিআইজি তন্ময় রায়চৌধুরি। তিনি চেন কিলিংয়ের বিষয়ে বিশদে খোঁজখবর নেন। ঘন্টা দেড়েক বিভিন্ন বিষয়ে জেলার পুলিস সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেন ডিআইজি। কি কারণে একের পর এক চেন কিলিংয়ের চেষ্টার ঘটনা ঘটছে সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেন ডিআইজি।
মঙ্গলবার সাতগেছিয়ায় সেগুন বাগানের কাছে বাড়ি থেকে মমতা কিস্কুকে (৫০) রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মেমারির পাহাড়হাটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সময় ঘরে কেউ ছিলনা। তাঁর স্বামী শ্যামাপদ কিস্কু গোরু নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন। দুই ছেলে খেতমজুরের কাজে বাইরে ছিলেন। খাবার খেতে দুপুরে বাড়িতে এসে তাঁর দুই ছেলে মমতা দেবীকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। শ্যামাপদ বলেন, আমার কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। কি জন্য আমার স্ত্রীকে খুন করা হল তা বুঝতে পারছি না। এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই বড়া গ্রাম থেকে রীতা রায় (৫২)-এর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তাঁর মাথার পিছনেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। শাড়ি অবিন্যস্ত অবস্থায় ছিল। খবর পেয়ে পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিসকে ঘিরে রেখে বিক্ষোভ দেখায়। অনেক রাত পর্যন্ত জেলার সিনিয়র অফিসাররা বড়া গ্রামে ছিলেন। যথাযথ তদন্তের আশ্বাস মেলার পর বিক্ষোভ থামে। মেমারি থানার এক অফিসার বলেন, ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোের্ট দু’জনের মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে, এর সঙ্গে চেন কিলিংয়ের সম্পর্ক নেই বলে মনে হচ্ছে। দু’টি বাড়িতেই মিটার নেই। তাছাড়া মৃতাদের গলায় চেন প্যাঁচানোর কোনও চিহ্ন মেলেনি। পুলিস সুপার বলেন, দু’টি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। দু’টি ঘটনাস্থলের দূরত্ব ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারের মধ্যে। দু’টি ঘটনা প্রায় একই সময়ে ঘটেছে। কাজেই খুনি একই না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে, সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দু’টি বাড়িতেই বিদ্যুতের মিটার নেই। সে কারণে কালনার মতো মিটার দেখার নাম করে চেন কিলাররা খুন করেছে এই তত্ত্ব প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছেনা। খুনিকে ধরার জন্য সব ধরণের চেষ্টা চলছে।