মেমারী (পূর্ব বর্ধমান) :- মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সিআইডির তদন্তকারী দল পূর্ব বর্ধমানের মেমারী থেকে আটক করল দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সহ মোট ৪জনকে। বাজেয়াপ্ত করা হল ৪টি মোবাইল ফোনও। এদের মধ্যে ২জন মেমারীর হাটপুকুর এলাকার মামুন ন্যাশনাল স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। গতকাল রাত্রি প্রায় সাড়ে নটা নাগাদ মাধ্যমিকের প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত বিষয়ে গঠিত সিআইডির একটি দল কলকাতা থেকে এসে আচমকা হানা দেয় মেমারীর ওই স্কুলে। ওই স্কুলের এবছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মালদার কালিয়াচক এলাকার বাসিন্দা সাহারুল আমির এবং কাটোয়ার কৈথন এলাকার বাসিন্দা শাহাবাজ আলি মণ্ডলকে রাত্রি প্রায় আড়াইটে পর্যন্ত টানা জিজ্ঞাসাবাদ চালান তদন্তকারী সিআইডির আধিকারিকরা। এরপর তাঁদের নিয়ে তদন্তকারী দল পৌঁছায় মেমারী থানায়। সঙ্গে নিয়ে যান তাঁদের দুটি মোবাইল ফোনও। এরপর সোমবার সকালে তদন্তকারী দল মেমারীর কৃষ্ণবাজার এলাকার অভিনন্দন লজে হানা দেন। সেখানে লজে থাকা দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এদের মধ্যে একজন মালদার কালিয়াচকের এবং অপরজন হুগলীর পান্ডুয়ার বাসিন্দা। জানা গেছে, তাঁরা মোবাইল নিয়ে আপত্তিকর কিছু করার জন্য মামুন ন্যাশনাল স্কুলের হোষ্টেল থেকে তাদের প্রায় মাস সাতেক আগে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই তারা ওই লজে থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। স্কুলের নিয়মানুযায়ী স্কুলে মোবাইল নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। মোবাইল নিয়ে গেলে তা ভেঙেও দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও ওই দুজন নিয়মিত মোবাইল নিয়ে যাচ্ছিল। বারবার নিষেধ করলেও তারা তা না শোনায় তাদের স্কুলের হোষ্টেল থেকে বার করে দেওয়া হয়। দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর একজনের সিট পড়েছে মেমারি রসুলপুর হাইস্কুলে। অপরজনের সিট পড়েছে বাগিলা হাইস্কুলে। তদন্তকারী দল জানতে পারে, কালিয়াচকের বাসিন্দা মেমারীর লজে থাকা ধৃত ওই ছাত্র একটি হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ তৈরী করেন – খোকাবাবু ৪২০ নামে। যেখানে অধিকাংশ সদস্যই রয়েছেন মালদা এলাকার। মোট ৫০জন সদস্য রয়েছেন ওই গ্রুপে। ওই হোয়াট্সআপ গ্রুপের মাধ্যমেই এবছর মাধ্যমিকের প্রথম দিন থেকে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটছে। কাটোয়ার কৈথন গ্রামের নীলের পাড় এলাকার বাসিন্দা শাহাবাজ আলি মণ্ডলের মামা জালাল আহমেদ সেখ এবং বন্ধু আলমগীর খান জানিয়েছে্ন, সাহবাজের বাবা সেনাবাহিনীতে কর্মরত। সাহাবাজ স্কুলের নিয়ম মেনেই কোনো ফোনই ব্যবহার করত না। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র সে। একমাত্র বাড়িতে এলেই সে ফোন ব্যবহার করত। তা সত্ত্বেও কিভাবে এই ঘটনায় সে জড়িয়ে গেল নাকি তাকে ফাঁসানো হয়েছে তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। এদিকে, সোমবার সকালে ধৃতদের নিয়ে কলকাতায় চলে যাবার ঘটনায় এদিন সকালেই খবর পেয়ে সাহাবাজের মা সামিমা বেগম কলকাতায় গেছেন। সূত্রের খবর, অভিযুক্তরা মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র ফাঁস ও এবং তার উত্তর শেয়ার করার জন্য খোকাবাবু ৪২০ নামে এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিল। প্রশ্নপত্র দেওয়ামাত্রই দুই পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে এই গ্রুপে পোস্ট করে দিত। তারপর পরীক্ষা হলের বাইরে বসে সেই প্রশ্নের উত্তর লিখে পালটা পোস্ট করা হত গ্রুপে। এদিকে, এই ঘটনায় মামুন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সানাউল্লা মণ্ডল জানিয়েছেন, মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ওই দুই ছাত্র মোবাইল ব্যবহার করায় তাদের স্কুল থেকে বার করে দেওয়া হয়। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তাদের মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রশ্নফাঁসের এই ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, যদি তাঁরা দোষী হয় তাহলে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার। কিন্তু যদি তারা দোষী না হয় তাহলে তারা যেন শাস্তি না পায় সেটাও দেখা দরকার।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতরা খোকাবাবু-৪২০ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলে। প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা গ্রুপে পোস্ট করে দিত। তারপর প্রশ্নের উত্তর লিখে তা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়া হত। গ্রুপে আরও কয়েজন সদস্য রয়েছে বলে সিআইডি জেনেছে। এবার মাধ্যমিকে মোবাইলের ব্যবহার নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তারপরও কিভাবে মোবাইলে ছবি তুলে তা বাইরে পাঠানো হত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে কি নজরদারি এড়িযে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতরা হলে মোবাইল নিয়ে যেত? বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।