Breaking News

পুলিসের জালে চেন কিলার, ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার সাইকেলের চেন ও লোহার রড

Police arrested Serial killer (Chain Killer) of Kalna

গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- অবশেষে পুলিসের জালে চেন কিলার। রবিবার বিকালে তাকে কালনা থানার সাতপুকুর এলাকা থেকে পুলিস গ্রেপ্তার করে। ধৃতের নাম কামরুজ্জামান সরকার। মুর্শিদাবাদে তার আদি বাড়ি। বছর দু’য়েক ধরে সে নাদনঘাটের সুজননগরে পরিবার নিয়ে থাকে। ভাঙাচোরা জিনিসপত্র কেনা-বেচা করে সে। পুলিসের দাবি, জেরায় কয়েকজন মহিলাকে খুন এবং আরও কয়েকজন মহিলার উপর হামলায় জড়িত থাকার কথা ধৃত কবুল করেছে। তাকে নিয়ে রাতেই বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিস। Road block to demand arrest of serial killer. At Singerkone, Kalna বাড়ি থেকে বেশকিছু সোনার ও ইমিটেশন গয়না উদ্ধার করেছে পুলিস। এছাড়াও একটি ক্যামেরা ও কয়েকটি মোবাইল পেয়েছে পুলিস। ধরা পড়ার সময় ধৃতের কাছে থাকা একটি নাইলনের ব্যাগ থেকে সাইকেলের চেন ও একটি ভারি লোহার রড পেয়েছে পুলিস। চেন ও লোহার রড ব্যবহার করে সে খুন করেছে বলে পুলিসের অনুমান। ধৃতের ব্যবহৃত একটি বাইকও পুলিস বাজেয়াপ্ত করেছে। বাইকে চেপেই সে কালনা, মেমারি, হুগলির পাণ্ডুয়া, বলাগড় প্রভৃতি এলাকায় যাতায়াত করত বলে জেনেছে পুলিস। তবে, কেন সে একের পর এক মহিলাকে খুন ও হামলা চালিয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় পুলিস। Police arrested Serial killer (Chain Killer) of Kalna মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে সে এ ধরণের কাজ করে থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিস। আরও জিজ্ঞাসাবাদের পরও খুনের মোটিভ সম্পের্ক জানা সম্ভব হবে বলে দাবি পুলিসের। সোমবার ধৃতকে একটি খুনের মামলায় কালনা আদালতে পেশ করা হয়। তদন্তের প্রয়োজনে এবং ঘটনার পুনির্নর্মাণ করতে ধৃতকে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় পুলিস। ধৃতকে ১২ দিন পুলিসি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। Road block to demand arrest of serial killer. At Singerkone, Kalna
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২১ মে সন্ধ্যায় কালনার গোয়ারা গ্রামে ভাড়াবাড়ি থেকে পুতুল মাঝির রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা ঘরে ঢুকে তাঁর মৃতদেহ মেঝেয় পড়ে থাকতে দেখেন। সেই ঘটনায় কামরুজ্জামান জড়িত বলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছে পুলিস। সেই ঘটনায় এদিন তাকে হেফাজতে নেয় পুলিস। এর আগে ৮ এপ্রিল কালনায় এক মহিলাকে খুনের চেষ্টা করা হয়। ঘটনার দিন কালনার রংপাড়ার স্বরূপা বিবি তাঁতের কাজ করছিলেন। Police arrested Serial killer (Chain Killer) of Kalna সেই সময় এক দুষ্কৃতি পিছন থেকে তাঁর উপর হামলা চালায়। তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুনে চেষ্টা করে দুষ্কৃতি। স্বরূপা নিজেকে মুক্ত করে কোনও রকমে বাইরে বেরিয়ে এসে চিৎকার শুরু করেন। ভয় পেয়ে দুষ্কৃতি পালিয়ে যান। স্থানীয় বাসিন্দারা দুষ্কৃতিকে দৌড়ে পালাতে দেখেন। এর আগে ২৭ জানুয়ারি কালনার আনুখাল এলাকায় পুষ্প দাস নামে এক প্রৌঢ়াকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। তাঁর সোনার গয়না ও টাকা নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতি। তার দিনকয়েক আগে কদম্বা গ্রামে মিটার দেখার নাম করে বাড়িতে ঢুকে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা করা হয়। এই ঘটনাগুলিতে সে জড়িত বলে জেরায় স্বীকার করেছে কামরুজ্জামান। Road block to demand arrest of serial killer. At Singerkone, Kalna
এ বছরেরই ২ এপ্রিল কয়েকঘন্টার ব্যবধানে মেমারি থানার বড়া ও সাতগেছিয়া গ্রামে দুই মহিলাকে খুন করা হয়। বড়া গ্রামের সিদ্ধেশ্বরপাড়ার রীতা রায় বাড়িতে একা ছিলেন। বেলা ২টো নাগাদ তাঁর মেয়ে শোভা বিশ্বাস বাড়িতে এসে মায়ের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। মৃতার গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাতের লক্ষণ ছিল। সেদিনই সাতগেছিয়ার সেগুনবাগানের কাছে বাড়ি থেকে মমতা কিস্কুকে (৫০) রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মেমারির পাহাড়হাটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মাথাতেও ভারি কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। সব ক’টি ঘটনাতেই চেন কিলারের যোগ রয়েছে বলে সন্দেহ করেন বাসিন্দারা। Police arrested Serial killer (Chain Killer) of Kalna
এর আগে মেমারি থানার জাবুইডাঙায় ঘর থেকে সোনি যাদবের (১৯) মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি চেন উদ্ধার হয়। এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি কালনার উপলতি গ্রামে এক বৃদ্ধার উপর হামলা চালায় দুষ্কৃতিতে। সেই সময় ছেলে চলে আসায় দুষ্কৃতি দৌড়ে পালায়। বেঁচে যান বৃদ্ধা। বৃহস্পতিবার কালনার সিঙ্গেরকোণে এক নাবালিকার উপর হামলা হয়। ধর্ষণের পর তাঁকে খুনের চেষ্টা করা হয়। হুগলির বরাগড়েও একই কায়দায় এক মহিলা খুন হন।
পরপর খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে। প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিসের ভূমিকা। খুনিকে ধরতে নানাভাবে চেষ্টা চালায় পুলিস। বিভিন্ন জায়গা থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে সম্ভাব্য খুনিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চালায় পুলিস। এছাড়াও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে শিল্পীকে দিয়ে খুনির ছবি আঁকায় পুলিস। তা বিভিন্ন থানায় এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের দেওয়া হয়। বিভিন্ন সূত্র মারফত পুলিস জানতে পারে, খুনি একজনই। সে বাইকে চেপে এসে অপারেশন সেরে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে। রবিবার এক সিভিক ভলান্টিয়ার কালনার সাতপুকুর এলাকায় বাইকে চেপে যাওয়ার সময় কামরুজ্জামানকে ধরে। তার কাছে থাকা ব্যাগ থেকে চেন ও রড মেলায় সিভিক ভলান্টিয়ারের সন্দেহ হয়। তিনি থানায় খবর দেন। এরপর কামরুজ্জামানকে থানায় নিয়ে গিয়ে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস। জিজ্ঞাসাবাদে ভেঙে পড়ে সে ৬টি খুনে এবং সমসংখ্যক হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। মেমারির দেবীপুরে অপারেশন সারতে সে যাচ্ছিল বলে পুলিসকে জানায় কামরুজ্জামান। জেলা পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, চুরির উদ্দেশ্য নয়, নেশা চাপলেই খুন করে কামরুজ্জামান। কালনা, মন্তেশ্বর, মেমারি ও হুগলির পাণ্ডুয়া ও বলাগড়ের ৬টি খুনের ঘটনায় সে জড়িত। আরও কয়েকটি খুনের চেষ্টাতেও সে জড়িত। ৩ বার সে খুনের ধরণ পাল্টেছে। প্রথমে মিটার দেখার নাম করে ঘরে ঢুকে সে খুন করত। টার্গেট হিসাবে সে মহিলাদের বেছে নেয়। খুনের আগে সে এলাকায় বেশ কয়েকবার রেইকি করত। তারপর মহিলাকে একা পেলেই অপারেশন সারত। কয়েকটি ক্ষেত্রে বাড়িতে লোক থাকায় সে ব্যর্থ হয়। কোনও রকমে পালায় সে। ৩ বার ব্যর্থ হওয়ার পর সে খুনের ধরণ বদলায়। মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন করার পদ্ধতি সে বেছে নেয়। পরে ধরণ বদল করে ধর্ষণের পর মহিলাদের চেন পেঁচিয়ে ও মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে খুন করতে শুরু করে সে। এর আগে ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি কালনার ধাত্রীগ্রামের প্রৌঢ়া পূর্ণিমা গঙ্গোপাধ্যায় এবং সেই বছরেরই ২৭ জানুয়ারি মন্তেশ্বরের কুঁড়েপাড়ার সাধনা চট্টোপাধ্যায়কে খুনের ঘটনাতেও সে জড়িত বলে কামরুজ্জামান স্বীকার করেছে। ধৃতকে বিভিন্ন মামলায় হেফাজতে নিয়ে সব ক’টি ঘটনার পুননির্র্মাণ করা হবে।

About admin

Check Also

Stock Photo - The University of Burdwan - Administrative Campus - Rajbati Campus - Photo by Sanjoy Karmakar, Purba Bardhaman

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২ কোটি টাকা নয়ছয়ের ঘটনায় তদন্ত শুরু করলো ইডি

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা নয়ছয়ের ঘটনায় তদন্ত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *