গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেন রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল গনি। বুধবার ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সার্কিট হাউসে বৈঠক করেন ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান। বৈঠকে তিনি ছাড়াও সংখ্যালঘু উন্নয়ন কমিশনের চেয়ারম্যান আবু আয়েস মণ্ডল, ওয়াকফ বোর্ডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মুফতি শামিম সওকত, জেলা শাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, পুলিস সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, অতিরিক্ত জেলা শাসক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ওয়াকফ সম্পত্তি জবরদখল হয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান। জবরদখলকারীদের না হটিয়ে সেখান থেকে ভাড়া আদায় করে কিভাবে ওয়াকফ বোর্ডকে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। উচ্ছেদের মতো কড়া অবস্থান না নিলেও জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে ওয়াকফ আইন কড়াভাবে পদক্ষেপের জন্য প্রশাসনের আধিকারিকদের বলেন বোর্ডের চেয়ারম্যান। ওয়াকফ আইনের পরিবর্তন এবং তা প্রয়োগের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে।
বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত বোর্ড। মোতোয়ালিদের অগ্রাহ্য করে বিভিন্ন জায়গায় ওয়াকফের সম্পত্তি দখল করে নেওয়া হচ্ছে। এমনকি ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তরও করা হচ্ছে। অথচ ওয়াকফ আইনে সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না। বন্ধক দেওয়া যায় না। এমনকি সম্পত্তির চরিত্র বদল করা যায় না। অথচ, এসবই হচ্ছে। ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাওয়া রুখতে প্রশাসনের কর্তাদের ওয়াকফ আইনের ৫২ ধারা পরিবর্তনের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা হয়। আইনভঙ্গকারীদের ২ বছর জেল পর্যন্ত বিধান যে ওয়াকফ আইনে রয়েছে তা স্মরণ করিয়ে দেন ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান। বোর্ডের নির্দেশ পালনের ব্যাপারে জেলা শাসক, অতিরিক্ত জেলা শাসক ও মহকুমা শাসকদের যে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তাও মনে করিয়ে দেন বোর্ডের চেয়ারম্যান। পরে প্রাক্তন বিচারপতি আব্দুল গনি বলেন, বহু জায়গায় ওয়াকফের সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের নানা মহলে জানিয়েও কাজ হচ্ছে না। ওয়াকফ বোর্ডের আইনে জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। আইনের ৫২ ধারায় ২ বছর জেলের বিধান রয়েছে। এমনকি আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করা যেতে পারে। প্রশাসনের কর্তাদের জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলায় মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রামে প্রচুর পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। কোনওভাবেই তা দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে, জবরদখলকারীদের না হটিয়ে কিভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে ভাড়া আদায় করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। জেলায় নথিভুক্ত ওয়াকফের সংখ্যা ২ হাজার ২৪৫টি আর ওয়াকফ সম্পত্তির পরিমাণ ১৫ হাজার ৮২৬ একর। তারমধ্যে অনেকটাই বেদখল হয়ে আছে। বেদখলকারীদের চিহ্নিত করে ওয়াকফ সম্পত্তি তাদের লিজে অথবা ভাড়ায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংখ্যালঘু উন্নয়ণ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, যারা জোর করে ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করে রয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ওয়াকফের আয় থেকেই ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়া হয়। সংখ্যালঘুদের উন্নয়ণের জন্য ওয়াকফের আয় বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। বেদখল হওয়া ওয়াকফ সম্পত্তি যাতে উদ্ধার হয় তার জন্য সব ধরণের চেষ্টা চলছে।
Check Also
বন্ধুর সঙ্গে পিৎজা খেতে বের হয়ে ধর্ষণের শিকার যুবতী, গ্রেপ্তার ৫
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বন্ধুর সঙ্গে পিৎজা খেতে বের হয়ে ধর্ষণের শিকার হলেন এক যুবতী। …