বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ” বামফ্রণ্ট একতরফাভাবেই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। তাই ভদ্রলোকের শর্ত না মেনে এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করায় আমরা দিল্লী হাইকমাণ্ডের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছি। ” এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা কংগ্রেস সভাপতি আভাষ ভট্টাচার্য। শুক্রবার সন্ধ্যায় আলিমুদ্দিন স্ট্রীট থেকে বামফ্রণ্টের ২৫টি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দুই বর্ধমান জেলার মোট ৩টি আসনের একটিতেও কংগ্রেস প্রার্থীদের জন্য সিট না ছাড়ায় রীতিমত ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সিপিএমের সঙ্গে জোট করতে গিয়ে দুই বর্ধমান থেকে কংগ্রেস ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবার আশংকাও করেছেন কংগ্রেসের কর্মী–নেতৃত্বরা। ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে, ২০১৬ সালে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট নিয়ে রীতিমত ক্ষোভের পারদ চড়েছিল কংগ্রেসের নিচু মহলে। বারবার কংগ্রেসের ব্লক স্তরের বৈঠক থেকে জেলাকমিটির বৈঠকেও এব্যাপারে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বারে বারেই দুর্দিনের মধ্যে থাকা কংগ্রেসের কর্মীরা নিজেদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে প্রদেশ নেতৃত্ব থেকে একেবারে সর্বভারতীয় নেতৃত্বের কাছেও দরবার করে জোটের বিরোধিতা করে কংগ্রেসের ঐতিহ্যকে বজায় রাখতে সমস্ত আসনেই কংগ্রেসের লড়াই করার আবেদন জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু সিপিএমের সঙ্গে আবার কখনও তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করতে গিয়ে কংগ্রেসের নিচু তলার কর্মীদের সেই আবেগের আবেদনকে কার্যত পাত্তাই দেওয়া হয়নি। যা নিয়ে রীতিমত ক্ষোভে ফুঁসেছেন কংগ্রেসের কর্মীরা। অনেকেই ২০১১ এবং ২০১৬ সালের নির্বাচন থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখে দিয়েছিলেন। এবারেও লোকসভা নির্বাচনের আগেই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এবং বিশেষত কংগ্রেসের নিচুতলা থেকেই একলা চলো নীতির পক্ষেই আওয়াজ উঠেছিল। কিন্তু এবারেও কার্যত তা না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা কংগ্রেস। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি পূর্ব বর্ধমানের জেলা কংগ্রেস সভাপতি আভাষ ভট্টাচার্যও। তিনি জানিয়েছেন, সিপিএম ভদ্রলোকের মত কাজ করল না তড়িঘড়ি এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। তি্নি জানিয়েছেন, যখন একটা আলোচনা চলছে আসন রফা নিয়ে। এমনকি ১৬ তারিখের মধ্যে গোটা বিষয়টি মিটে যাবার কথাও বলা হয়েছিল সেখানে একদিন আগেই এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে কংগ্রেসকে অপমান করা হয়েছে। আভাষবাবু জানিয়েছেন, এব্যাপারে জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁরা সর্ভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানাবেন। একইসঙ্গে ফের দাবী করবেন কোনো জোট নয়, রাজ্যে কংগ্রেস ৪২টি আসনেই লড়াই করুক। তাতে হারলেও ক্ষতি নেই। কংগ্রেসের ঐতিহ্য বজায় থাকবে। আভাষবাবু জানিয়েছে্ন, রায়গঞ্জে তাঁরা ১৭০০ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও জোটের সম্মান রাখতে রায়গঞ্জ সিপিএমকে ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় সিপিএম আগাম প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করায় জোটের দায়বদ্ধতায় ধাক্কা খেল। এদিকে, শুক্রবার সিপিএমের পক্ষ থেকে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার পরই জোরকদমে রাস্তায় নেমে পড়েছে সিপিএম। বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন মুখ তথা সিপিএমের দাপুটে নেতা আভাষ রায়চৌধুরীকে। যদিও এই আসনে সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক এবং সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদারের নাম ঘোরাফেরা করছিল। বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে প্রার্থী করা হয়েছে গতবারের প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাসকেই। এদিনই ভাতার, মেমারী এবং বর্ধমান শহরে মিছিল করে সিপিএম দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে।
Tags Communist Party of India (Marxist) Congress CPI(M) CPM Election Indian National Congress Lok Sabha Lok Sabha Election Lok Sabha Election 2019
Check Also
গত এক মাসে পূর্ব বর্ধমান জেলায় লাগাতার ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় ফের পথে নামছেন আন্দোলনকারীরা
বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- এক মাসের মধ্যে কেবলমাত্র পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই একাধিক ধর্ষণ এবং …