গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- টিআই প্যারেডে জাহানার বাবা মহম্মদ মুস্তাফা ওরফে মুস্তাক ও দাদা মহম্মদ জাহিদকে শনাক্ত করলেন জামালপুর থানার দুই সিভিক ভলান্টিয়ার অমিত সাহানি ও অনন্ত হাজরা। বৃহস্পতিবার বর্ধমান সংশোধনাগারে অনার কিলিংয়ের ঘটনায় ধৃত মুস্তাফা ও জাহিদের টিআই প্যারেড করানো হয়। দু’জনকে আলাদাভাবে সংশোধনাগারের ১০ আবাসিকের মধ্যে রাখা হয়। বাকি ৯ জনের আকৃতি ও গঠন একই রকম ছিল। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জনের আলাদা করে টিআই প্যারেড করানো হয়। পৃথক সময়ে টিআই প্যারেড করানো হয়। অনন্ত ও অমিতকে আলাদাভাবে শনাক্তকরণের জন্য হাজির করানো হয়। তারা দু’জনকে শনাক্ত করেন। ঘটনার দিন রাতে ঘটনাস্থলের কাছে লরি পার্কিংয়ের কাছে ডিউটি করছিলেন দুই সিভিক ভলান্টিয়ার। পার্কিংয়ের কাছে একটি ছাউনিতে বাবা ও দাদার সঙ্গে জাহানাকে দেখতে পান তারা। পরেরদিন সকালে জাহানার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। বর্ধমানের পঞ্চম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিকা চট্টোপাধ্যায় সাহা টিআই প্যারেডের সময় উপস্থিত ছিলেন। টিআই প্যারেড করানোর সময় অবশ্য পুলিসের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। সিল করা খামে সিজেএম আদালতে টিআই প্যারেডের রিপোর্ট জমা দিয়েছেন পঞ্চম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এদিনই পঞ্চম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে জাহানার প্রেমিকের গোপন জবানবন্দি নথিভূক্ত করানো হয়। ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে এবং জাহানাকে খুনে ব্যবহৃত পাথরের চাই উদ্ধারের জন্য ধৃতদের ১০ দিনের পুলিসি হেপাজতে নেওয়ার জন্য এদিন আদালতে আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার নিবেদন শিকদার। শুক্রবার ধৃতদের আদালতে পেশের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা। ধৃতদের উপস্থিতিতে পুলিসি হেপাজতে নেওয়ার আবেদনের শুনানি হবে।
তদন্তে নেমে আরও কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিস। ২০১৬ সালের নাগপুর থেকে চাকএলাহাদাদের বাড়িতে ফেরেন ওই যুবক। জাহানাই তাকে কথা বলার জন্য ফোন নম্বর দেন। দিনকয়েকের মধ্যে দু’জনের মধ্যে ভাব-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নাগপুরে ফিরে যাওয়ার পর ফোনে জাহানার সঙ্গে তার প্রেমিকের কথাবার্তা হত। প্রেমের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জাহানাকে বাড়িতে প্রচণ্ড মারধর করা হত। তার প্রেমিকের পা কেটে দেওয়ার হুশিয়ারি দেয় জাহানার দাদা। তারপর থেকে আত্মীয় সহিস্তার মাধ্যমে ফোনে প্রেমিকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন জাহানা। ২০১৮ সালে হোলিতে দেশের বাড়িতে ফেরেন জাহানার প্রেমিক। সেই সময় জাহানা প্রেমিকের বাড়িতে তার সঙ্গে দেখা করেন। কান্নাকাটি করে তাকে নাগপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন জাহানা। এরপর কর্মস্থলে ফিরে যান জাহানার প্রেমিক। দিনকয়েকের মধ্যেই জাহানা নাগপুরে পালিয়ে যান। জাহানাকে এক বন্ধুর বাড়িতে রাখেন তাঁর প্রেমিক। জাহানার নাগপুরে চলে যাওয়ার পর প্রেমিকের বাড়িতে হামলা পর্যন্ত হয়। এমনকি তার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। ভয় পেয়ে জাহানাকে নিয়ে স্থানীয় থানায় চলে আসেন তাঁর প্রেমিক। এলাকায় দু’জনের ভাব-ভালোবাসা নিয়ে সালিশি সভা বসে। সেখানে কেউ কারোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে তার পরিবারকে গ্রামছাড়া করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। জাহানাকে যে তার বাবা ও দাদা কলকাতায় নিয়ে গিয়েছে তা সহিস্তার মাধ্যমে জানতে পারেন ওই যুবক। নাগপুরেও জাহানার কয়েকজন আত্মীয় রয়েছে। সেখানেও জাহানার সঙ্গে না মেলামেশার জন্য হুমকি দেওয়া হয় তার প্রেমিককে। ভয়ে তিনি নাগপুর ছেড়ে মুম্বইয়ে চলে যান।