Breaking News

নামীদামি কোম্পানির ভেজাল সিমেণ্ট কারখানার হদিশ, গ্রেপ্তার কারখানা মালিক ও ম্যানেজার

বিপুন ভট্টাচার্য, রায়না (পূর্ব বর্ধমান) :- দীর্ঘদিন ধরেই ভেজাল সিমেণ্টের কারখানা চলছিল রমরমিয়েই। কখনও বর্ধমানের ২নং জাতীয় সড়কের তেলিপুকুর এলাকায় আবার কখনও রায়না থানার বাঁকুড়া মোড়ের কাছে চলছিল দেদার ভেজাল সিমেণ্টের কারখানা। আর সাধারণ মানুষ আসল নকল না বুঝেই রীতিমত বিপদকে মাথায় ধারণ করেছেন এই ভেজাল সিমেণ্ট কিনে। আর গত কয়েক বছর ধরেই ভেজাল সিমেণ্টের কারবার চালিয়ে যাবার পর অবশেষে বুধবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ল বর্ধমান শহরের বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ বৈরাগ্য ওরফে রবি বৈরাগ্য। বুধবার বর্ধমানের রায়না থানার বাঁকুড়া মোড়ের একটি কারখানা থেকে কারখানার মালিক রবি বৈরাগ্য এবং কারখানার ম্যানেজার তারাপদ বৈরাগ্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাঁকুড়া মোড়ের একটি কোল্ড স্টোরেজের আড়ালে বেশ কিছুদিন ধরেই এই ভেজাল সিমেণ্টের কারখানা চালানো হচ্ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বুধবার সকালে আচমকা হানা দেন বর্ধমান জেলা পুলিশের এনফোর্সমেণ্ট ব্রাঞ্চের অফিসাররা। রায়না থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এদিন আচমকা কারখানায় হানা দিয়ে হাতেনাতে ধরে ফেলেন কারখানার মালিক ও ম্যানেজারকে। সেই সময় কারখানায় প্রায় ৮জন শ্রমিকও কাজ করছিলেন। তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় কারখানার বেশ কিছু মেশিনপত্রও। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি নামীদামী সিমেণ্ট কোম্পানীর নষ্ট হয়ে যাওয়া (ড্যামেজ) সিমেণ্টগুলিকে নিয়ে আসা হত এই কারখানায়। এই কারখানায় জমাট বেঁধে যাওয়া সিমেণ্টগুলিকে ফের গুঁড়ো করে তার সঙ্গে গঙ্গার পলি মেশানো হত। এরপর পুনরায় মেশিনের সাহায্যে সেই ভেজাল সিমেণ্টকে ভরে দেওয়া হত নামীদামী কোম্পানীর সিমেণ্টের বস্তায়। এরপর তা চালান করে দেওয়া হত। এদিন এই ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ হানা দেয়। কারখানার মালিক এবং ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর কারখানার শ্রমিকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কারখানার কো্নো শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে কোথা থেকে এই সিমেণ্টের নষ্ট হয়ে যাওয়া বস্তাগুলি নিয়ে আসা হত এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নামীদামী কোম্পানীর কেউ জড়িত কিনা সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এখনও এব্যাপারে তাঁরা কিছু জানতে পারেননি। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর তদন্ত করে দেখা হবে। তিনি জানিয়েছেন, ওই কারখানা থেকে ১৫৪৪ বস্তা ভেজাল সিমেণ্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে মাত্র এক বস্তা গঙ্গার পলি।এছাড়াও একটি ল্যাপটপও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, ধৃত ওই কারখানার মালিক জানিয়েছেন, প্রায় মাস ৬ আগে ভাড়ায় তিনি এই জায়গায় কারখানা তৈরী করেন। এই কারখানা করার জন্য তাঁর নাকি কাগজপত্রও আছে বলে জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভেজাল এই সিমেণ্ট বর্ধমানের বিভিন্ন ব্লকে পায়খানার পাট তৈরী, জাফরী তৈরী, ইঁট ভাঁটা সহ ক্ষুদ্র শিল্পে সরবরাহ করা হত। এছাড়াও পাশ্বর্বতী হুগলীতেও এই সিমেণ্ট সরবরাহ করা হত বলে তিনি জানিয়েছেন। ধৃত রবীন্দ্রনাথ বৈরাগ্য জানিয়েছেন, এটা যে অবৈধ কারবার সেটা তিনি জানতেন না। কারণ তিনি বৈধভাবেই ওই সমস্ত কারখানা থেকে ড্যামেজ তথা সিমেণ্টের ফাটা বস্তাগুলো সংগ্রহ করতেন। এরপর তিনি সেই বস্তা বদলে নতুন বস্তায় সিমেণ্ট ভরে তা বিক্রি করতেন। তবে তিনি অস্বীকার করেছেন এই কাজে গঙ্গার পলি বা ওই জাতীয় কিছু মেশানো হত না। অন্যদিকে, জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বাজেয়াপ্ত সিমেণ্ট থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলি পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরীতে পাঠানো হচ্ছে।

About admin

Check Also

The court ordered the auction of the bungalow of the district magistrate of Purba Bardhaman

পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসকের বাংলো ক্রোকের নির্দেশ দিল আদালত

গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য অধিগৃহীত জমির দাম না মেটানোয় পূর্ব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *