Breaking News

জাতীয় সড়ক ১১৬এ নির্মাণে জমির যোগ্য দামের দাবিতে চাষীদের ‘অসহযোগিতা আন্দোলন’

Farmers' 'non-cooperation movement' demanding fair price for land for economic corridor construction on National Highway 116-Aখন্ডঘোষ (পূর্ব বর্ধমান) :- খড়গপুর থেকে মোরগ্রাম চার লেনের জাতীয় সড়ক (116A) নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে না হতেই জমিজটের আন্দোলন শুরু হয়ে গেল। ২৩১ কিলোমিটার এই সড়কপথের জন্য ১০,২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করছে কেন্দ্র সরকার। এই রাস্তা নির্মাণ হলে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিরও আর্থিক বিকাশ হবে। মাত্র ৮ ঘণ্টার মধ্যে শিলিগুড়ি পৌঁছানো সম্ভব হবে। গত ২১ এপ্রিল পূর্ব বর্ধমান জেলাশাসক আয়েষা রানি এ.-র উপস্থিতিতে ন্যাশনাল হাইওয়ে ১১৬এ (National Highway 116A) ইকোনমিক করিডর নির্মাণ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই সড়ক পূর্ব বর্ধমান জেলার মধ্যে খন্ডঘোষ, গলসী ২, ভাতার, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ব্লকের উপর দিয়ে যাবে। এই রাস্তা নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি ডিভিসি, এসিডিসিএল-এর কিছু বৈদ্যুতিক খুঁটিকে সরানো এবং কিছু গাছও কাটা যাবে। প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, ২৩১ কিলোমিটার খড়গপুর-বর্ধমান–মোড়্গ্রাম সেকশন ‘ইকোনমিক করিডর’-এর মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৬২ কিলোমিটার রাস্তা হবে। এনএইচ ১১৬এ (NH 116A) নামে রাস্তাটি চওড়া হবে ২০০ ফুট। এর জন্যে ৪২৪.৪৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে খাস জমি ও জলাশয় বাদ দিলে ৩৬২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। জেলায় খণ্ডঘোষে ১৫টি-সহ ৪৬টি মৌজায় প্রায় ২২ হাজারের মতো জমিদাতা রয়েছে। খণ্ডঘোষ ও ভাতারে মাটি পরীক্ষা শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এদিকে, এই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হতে না হতেই জমির অধিক মূল্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে দিলেন খণ্ডঘোষের প্রায় ১৫টি মৌজার প্রায় ৪৫০ চাষি। Farmers' 'non-cooperation movement' demanding fair price for land for economic corridor construction on National Highway 116-A বুধবার খণ্ডঘোষের বোঁয়াইচণ্ডীতে এই মৌজাগুলির চাষীরা মিলিত হয়ে কৃষক ঐক্য মঞ্চের ব্যানারে একটি সভাও করেন। এরপরই তাঁরা ‘অসহযোগিতা আন্দোলন’ শুরু করেন। এই অসহযোগিতা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক সেখ শাহজাহান জানিয়েছেন, সড়ক নির্মাণের জন্য তাঁরা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ না পেলে জমি দেবেন না। তিনি জানিয়েছেন, সিঙ্গুরে কৃষিজমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালে তৈরি হওয়া নতুন জমি অধিগ্রহণ আইন (The Right to Fair Compensation and Transparency in Land Acquisition, Rehabilitation and Resettlement Act, 2013) মেনে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, এই দাবিতে তাঁরা এই ‘অসহযোগিতা আন্দোলন’ শুরু করেছেন। এদিনই তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় চলা মাটি পরীক্ষার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। সীমানা চিহ্নিত করণের খুঁটি ভেঙে দিয়েছেন। শাহজাহান জানিয়েছেন, বর্তমানে সরকার এই জমি অধিগ্রহণের জন্য বিঘা প্রতি মাত্র ৮ লক্ষ টাকা দিচ্ছে। কিন্তু তাঁদের দাবি বিঘা প্রতি ২ কোটি টাকা। তিনি জানিয়েছেন, জমির মূল্য নির্ধারণে এলাকাগতভাবে যাচাই করার কাজ সরকার করেনি। কারও কাছে জানতেও চায়নি। পুরনো ১৯৫৬ সালের জাতীয় সড়ক আইন (The National Highways Act, 1956) অনুসারে তাঁরা ক্ষতিপূরণ দিতে চাইছেন। প্রসঙ্গত, তিনি জানিয়েছেন, এই সড়ক নির্মাণ হলে কেবলমাত্র খণ্ডঘোষ ব্লকের মধ্যে ২৮ কিমি রাস্তা যাবে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের এই দাবি নিয়ে তাঁরা ২ মে, ১৩ মে পরপর জেলাশাসক-সহ মানবাধিকার কমিশন, রাষ্ট্রপতির কাছেও লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। এমনকি তাঁদের কিছু জানানোও হয়নি। এই অবস্থায় তাঁরা মঙ্গলবার থেকেই এই ব্লকের সমস্ত কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। শাহজাহান এদিন জানিয়েছেন, এমন অনেক চাষি আছেন যাঁদের সবটুকু জমিই চলে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁদের জন্য সরকারের কোনো বিকল্প কর্মসংস্থান বা অন্য কোনো সাহায্যের বিষয়ও কিছু জানানো হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, এরপরেও কাজ করতে এলে তাঁরা রাস্তা অবরোধ-সহ আদালতে মামলার পথেও যেতে প্রস্তুত। অন্যদিকে, সারা ভারত কৃষক সভার রাজ্য কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষ জানিয়েছেন, এলাকার চাষীরা জমি দিতে প্রস্তুত, কিন্তু তাঁদের যেমন ন্যায্য মূল্য দিতে হবে তেমনি সরকারকে বিকল্প ব্যবস্থাও করতে হবে। এব্যাপারে প্রশাসন চাষীদের নিয়ে বসে দ্রুত ব্যবস্থা করুক। অপরদিকে, খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম ওরফে ফাগুন জানিয়েছেন, এই সড়ক নির্মাণ হলে শুধু খণ্ডঘোষই নয় সামগ্রিকভাবে আর্থসামাজিক উন্নতি হবে। সেক্ষেত্রে চাষীরা জমি দেবেন। কিন্তু এই জমি চলে গেলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সবার আগে দেখা দরকার। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও চাননা চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই চাষীদের খুশী করেই জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এব্যাপারে এদিন জেলাশাসক আয়েষা রানি এ জানিয়েছেন, চাষীদের এই আন্দোলনের বিষয়টি শুনেছেন। এব্যাপারে চাষীদের সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্যার সমাধান করা হবে।

About admin

Check Also

More than a thousand intraperitoneal hydatid cysts removed from 18-year-old girl's stomach

১৮ বছরের তরুণীর পেট থেকে বের হল হাজারেরও বেশি বেলুনের ন্যায় তরলপূর্ণ সিস্ট

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- এক তরুণীর পেট থেকে বের হল হাজারেরও বেশী বেলুনের ন্যায় তরলপূর্ণ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *