বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- গোটা দেশ জুড়ে লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি ইতিমধ্যেই যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা শুরু করেছে। একেবারেই প্রথমে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। তৃণমূলের পিছনেই রয়েছে সিপিএম। একদা রাজ্যের ক্ষমতাসীন এই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের জট এখনও কাটেনি। কিন্তু ইতিমধ্যেই ঘোষিত প্রার্থীরা আদাজল খেয়েই মাঠে নেমে পড়েছেন জমি পুনরুদ্ধারে। কংগ্রেস এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। বিজেপির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতেই প্রার্থী ঘোষণার কথা। কিন্তু এসবের মাঝেই যখন গোটা রাজ্য জুড়ে আধা সামরিক বাহিনীর টহল শুরু হয়েছে সেই সময় এখনও আধা সামরিক বাহিনীর বর্ধমানে আসার কোনো খবর নেই। তাই জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকেই শুরু হল ফ্ল্যাগ মার্চ। সমস্তরকম ভয়ভীতি কাটিয়ে ভোটারদের মনোবল বৃদ্ধিকরা। ২০০৯ সালে বর্ধমানের নতুনগ্রামে সিপিএমের হাতে খুন হয়েছিলেন এলাকার দাপুটে তৃণমূল সংগঠক শিক্ষক মোল্লা সামসুর রহমান ওরফে মন্টু মাষ্টার। কিন্তু গত ১০ বছরেও আতংক কাটেনি মন্টু মাষ্টারের পরিবারের। এখনও তারা ভয়েই দিন কাটাচ্ছেন। মঙ্গলবার এই নতুনগ্রাম থেকেই জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুরু হল পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স দিয়ে রুট মার্চ। নেতৃত্ব দিলেন জেলা শাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব এবং জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। কথা বললেন মন্টু মাষ্টারের স্ত্রী এবং মেয়ের সঙ্গেও। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা, মোল্লা সামসুর রহমান ও শেখ জাফর আলি খুন হন। নামাজ পড়ে ফেরার পথে পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক সামসুর ওরফে মন্টু মাস্টার এবং জাফর ওরফে জফাই শেখকে খুন করা হয়েছিল। সিপিএমের ২৭ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। ১০ বছর আগে সেই ঘটনার পরেও মণ্টু মাষ্টারের পরিবারের মধ্যে থেকে ভীতি দূর হয়নি। তাই মঙ্গলবার বিকালে যখন খোদ জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সকে নিয়ে নতুনগ্রাম থেকে রুট মার্চ শুরু হল তখনও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে সেই আতংকের কথাই জানিয়েছেন নিহত মণ্টু মাষ্টারের স্ত্রী রিজিয়া বেগম এবং মেয়ে শ্যামলী খাতুন। ওই খুনের ঘটনায় অশান্ত হয়ে উঠেছিল গোটা এলাকা। তৃণমূলের দু’জন খুন হওয়ার পরে পাল্টা হামলায় গণপ্রহারে মারা যান সিপিএমের শেখ কুতুবুদ্দিন। যদিও গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, তিনি পালাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু সিপিএম পুলিশকে দিয়ে জোর করে খুনের মামলা রুজু করায়। তার জেরে বেশ কয়েক জনকে গ্রামছাড়াও হতে হয়েছিল। তৃণমূলের দুই নেতা খুনের ঘটনায় নতুনগ্রামে আসেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে মন্টু মাস্টারের ছেলে শেখ শাহনওয়াজ এবং জফাই শেখের ছেলে শেখ আনিসুর রহমানকে রেলে চতুর্থ শ্রেণির চাকরি দেওয়া হয়। এদিন জেলাশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপার উভয়েই মণ্টু মাষ্টারের পরিবারকে নির্ভয়ে থাকার এবং আসন্ন লোকসভা ভোটে নিজেদের নির্ভয়ে ভোট দেবার আবেদন জানান। যদি কোনো সমস্যায় পড়েন তাহলে ১৯৫০ এই নাম্বারে ফোন করারও আবেদন জানিয়ে যান প্রশাসনের কর্তারা। জেলাশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারের পাশাপাশি এদিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রিয়ব্রত রায়ের নেতৃত্বে গ্রামের অন্যান্য অংশেও টহল দেয় বাহিনী। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কথাও বলেন কয়েকজন গ্রামবাসীদের সঙ্গে। এদিন মণ্টু মাষ্টারের মেয়ে শ্যামলী খাতুন জানিয়েছেন, এখনও স্থানীয় সিপিএমের পক্ষ থেকে তাঁদের মাঝে মাঝেই হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। এদিন শ্যামলী জেলা পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের কাছে তাঁর বাবার খুনীদের উপযুক্ত শাস্তিরও দাবী জানান। একই দাবী জানান, মণ্টু মাষ্টারের স্ত্রী রিজিয়া বেগমও। জানিয়েছেন, এখনও সিপিএমের পক্ষ থেকে তাঁর ছেলেকে নানাভাবে হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। যদিও এব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল প্রামাণিক জানিয়েছেন, এটা সত্যই অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। এখনও যদি সিপিএম হুমকি দেয় তাহলে তা ভাবার মত বিষয়। তিনি দলীয় কর্মীদের এব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
Tags Election Flag March Lok Sabha Lok Sabha Election Lok Sabha Election 2019 Parliament Parliament Election Parliament Election 2019 Police Flag March Police Route march Route march নির্বাচন ভোট লোকসভা লোকসভা নির্বাচন
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …