বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- পূর্ব বর্ধমান জেলার ৬টি পুরসভায় নির্বাচন হতে চলেছে ২৭ ফেব্রুয়ারী। ইতিমধ্যেই নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান, মেমারী, কালনা, দাঁইহাট, কাটোয়া এবং গুসকরা পুরসভায় নির্বাচন হতে চলেছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হতেই বৃহস্পতিবার এই জেলার অধিকাংশ ওয়ার্ডে বামফ্রণ্ট প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছে। শুরুও হয়ে গেছে বামেদের প্রচার। আর এরই মাঝে শুক্রবার রাজ্য জুড়ে ১০৭ টি পুরসভার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। আর তৃণমূল কংগ্রেসের এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই শুরু হয়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ। এরই মধ্যে প্রথম প্রকাশিত তালিকায় সংশোধন এনে দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হয় তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু তারপরেও বিক্ষোভ থামাতো দূর অস্ত ক্রমশই বিক্ষোভ বেড়েই চলেছে।
উল্লেখ্য, তৃণমূলের প্রথম প্রার্থী তালিকা থেকে ইতিমধ্যেই বাদ পড়েছেন বর্ধমান পুরসভায় ৫ জন, দাঁইহাট পুরসভায় ৩ জন, কালনা পুরসভায় ১ জন, কাটোয়া পুরসভায় ৭ জন এবং মেমারী পুরসভায় ৩ জন। শুক্রবার সন্ধ্যে থেকেই বর্ধমান পুরসভায় একাধিক ওয়ার্ডে প্রার্থী বদলের দাবীতে বিক্ষোভ আছড়ে পড়তে থাকে রাস্তায়। শনিবারও তা অব্যাহতই শুধু নয়, ঘোষিত ও পরিবর্তিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অন্য গোষ্ঠীর মধ্যে হাতাহাতির জেরে নামাতে হল পুলিশের বিশাল বাহিনীকে। ক্রমশই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে বর্ধমান শহর জুড়ে। বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে সিংহভাগ ওয়ার্ডেই প্রার্থী করা হয়েছে বিধায়ক খোকন দাসের অনুগামীদের। বর্ধমান পুরসভার ২, ৩, ৫, ৬, ৭, ১০, ১১, ১৭, ১৯, ২০, ২৫, ২৭, ২৮, ৩০, ৩৩, ৩৫ নং ওয়ার্ডে বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ করা না হলেও দলেরই একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ওয়ার্ডে নির্দল তথা গোঁজ প্রার্থী খাড়া করতে শুরু হয়েছে পাল্টা আলোচনাও। তৃণমূলের একটি অংশের দাবী, রবিবারের মধ্যে এই প্রার্থী তালিকারও পরিবর্তন হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। এদিকে, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারী শেষ মনোনয়নপত্র জমা দেবার তারিখ। এখনও প্রার্থী নিয়ে চলছে চুলোচুলি। ফলে হাতে গোণা ৩ দিনের মধ্যে কিভাবে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে তা নিয়েও চলছে দুশ্চিন্তা। এদিকে, বর্ধমান পুরসভার পাশাপাশি মেমারী পুরসভাতেও ৫ এবং ৯ নং ওয়ার্ডে প্রার্থী বদলের দাবীতে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। কালনা পুরসভার ১৩নং ওয়ার্ড এবং গুসকরা পুরসভার ১৬নং ওয়ার্ডেও প্রার্থী বদলের দাবীতে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।
এরই পাশাপাশি শনিবার সকাল থেকেই কাটোয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অফিসে তৃণমূল প্রার্থীর নাম বদলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীরা। জেলার বিভিন্ন পুরসভা থেকে এদিন নেতা কর্মীরা প্রার্থী তালিকা নিয়ে জেলা সভাপতির কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রার্থী তালিকা বদল না হলে অনশনে বসার হুমকিও দিয়েছেন কেউ কেউ। এদিকে, যখন প্রার্থী তালিকা নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ আছড়ে পড়ছে সেই সময় শনিবার থেকে প্রচারে বেড়িয়ে পড়েছেন বহু প্রার্থী। অপরদিকে, তৃণমূলের এই প্রার্থী তালিকায় বর্ধমান পুরসভার বর্তমান পৌর প্রশাসক মণ্ডলীর মাত্র একজন উমা সাঁইকে টিকিট দেওয়া হলেও আর কাউকে টিকিট না দেওয়ায় গোটা শহর জুড়েই চর্চা শুরু হয়েছে।