বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- প্রায় ১৮টি বহুল ব্যবহৃত ওষুধের কোনো গুণাগুণই নেই – এই মর্মে রাজস্থান সরকার গোটা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের কাছে এগুলিকে বাতিল করার জন্য নোটিশ পাঠালেও অবাধে চলছেই এই সমস্ত নিষিদ্ধ ওষুধের বিক্রি ও ব্যবহার। রীতিমত এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়়িয়েছে খোদ বর্ধমানেও। জানা গেছে,রাজ্স্থান সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো এই ১৮টি ওষুধের তালিকা দিয়ে সমস্ত রাজ্য সরকারের কাছে বার্তা পাঠানো হয় – যা আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময়েই রাজ্য সরকারগুলির কাছে এসে পৌঁছায়। কিন্তু তারপরেও বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও খোদ বাংলার সরকারের পক্ষ থেকে এব্যাপারে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। এমনকি জেলায় জেলায় খোদ স্বাস্থ্য দপ্তরগুলিতেও পৌঁছায়নি কোনোরকম এব্যাপারে নির্দেশিকা। অথচ এই নিষিদ্ধ ওষুধের খবর কানে আসতেই রীতিমত শংকিত হয়ে পড়েছেন ওষুধ ব্যবহারকারী থেকে বর্ধমানের ওষুধ ব্যবসায়ীরাও। তাঁরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তাঁদের কাছে নতুন এই ১৮টি ওষুধ নিয়ে কোনোরকম নির্দেশিকা তাঁদের কাছে আসেনি। এমনকি এব্যাপারে জনসাধারণকে সার্বিকভাবে জানানোরও কোনো উদ্যোগ তাঁদের চোখে পড়েনি। খোদ পূর্ব বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিক ডা. প্রণব রায় জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তাঁদের কাছে কোনোরকম নির্দেশিকা আসেনি। আসলেই তাঁরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। বর্ধমানের একটি ওষুধের দোকানের মালিক শান্তনু পাঁজা জানিয়েছেন, এর আগে তাঁদের কাছে ৩৪৪টি ওষুধ নিয়ে নিষোধাজ্ঞা এসেছিল। তাঁরা ওই সমস্ত ওষুধ বিক্রি করেন না। কিন্তু নতুন এই রাজস্থান সরকারের নির্দেশিকা তাঁদের কাছে আসেনি। এমনকি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর থেকেও তাঁদের কাছে কোনো নির্দেশিকা আসেনি। উল্লেখ্য,গত ২ আগষ্ট রাজস্থান ড্রাগ কন্টোলার বিভাগ থেকে (মেমো নং – DC/Bulletin.2018/1656) একটি বার্তা পাঠানো হয় দেশের সমস্ত রাজ্য সরকারের কাছে। সেখানে বলা হয় – প্যাণ্টাপ্রাজল এবং ডমপেরিডন ট্যাবলেট, মনটেলুকাস্ট সোডিয়াম এবং লিভোসিট্রেজিন হাইড্রোক্লোরায়িড ট্যাবলেট, প্যাণ্টাপ্রাজল সোডিয়াম এবং ডমপেরিডন এসআর ক্যাপসুল, প্যাণ্টাপ্রাজল গ্যাসট্রো ট্যাবলেট,সেফপোডক্সিম ট্যাবলেট, এ্যামোক্সিসিলিন এবং পটাশিয়াম ক্লাভুলেনেট ট্যাবলেট, ক্যালসিয়াম যুক্ত ভিটামিন ডি৩ ট্যাবলেট,সেফিক্সিম ট্যাবলেট, এ্যাজিথ্রোমাইসিন ট্যাবলেট, গ্লিমেপিরাইড এবং মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড ট্যাবলেট, টেলমিসারটান ট্যাবলেট,ক্যালসিয়াম কারবোনেট, ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড জিংক এবং কোলেক্যালসিফেরল সাসপেনশন ২০০ মিলি, ডিকলোফেনাক সোডিয়াম ট্যাবলেট, হাইড্রোকোক্সটিসোন সোডিয়াম ইনজেকশন প্রভৃতি ১৮টি ওষুধের কোনো গুণই নেই। এই সমস্ত ওষুধের সুনির্দিষ্ট কোনো মানই নেই। রাজস্থান ড্রাগ কন্ট্রোলার বিভাগ থেকে পাঠানো ওই বার্তায় বলা হয়েছে চলতি বছরের গত ১৬ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই এই ওষুধগুলি নিয়ে ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে, এই সমস্ত ওষুধগুলি যাতে আর ওষুধ ব্যবহারকারীদের দেওয়া না হয় তা নিশ্চিত করতে ওই সমস্ত ওষুধ বিক্রি বন্ধ করা এবং মজুদ ওষুধগুলি বাজেয়াপ্ত করা দরকার। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার জন্যও ওই বার্তায় বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই সমস্ত ওষুধগুলিই চলতি সময়ে বিপুল পরিমাণে চালু ওষুধ বলে পরিচিত এবং তা বিপুল পরিমাণেই ব্যবহৃত হচ্ছে। মূলতই এই সমস্ত ওষুধগুলি কফ ভাইরাল জ্বর, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ এবং পেটের রোগ (গ্যাস) প্রভৃতি কারণে ব্যবহৃত হয় বলে জানা গেছে। এই সমস্ত ওষুধগুলি তৈরী হয় সিকিমের রাংপো এবং রেনপুল, হিমাচলপ্রদেশের সোলান, রাজস্থানের আজমীর এবং গুজরাটের আমেদাবাদের বিভিন্ন কারখানায়। রাজস্থান ড্রাগ কন্ট্রোলার থেকে জানানো হয়েছে এই সমস্ত ওষুধের মধ্যে এ্যাজিথ্রোমাইসিন ট্যাবলেট, এ্যামোক্সিসিলিন এবং পটাশিয়াম ক্লাভুলেনেট, প্যান্টাপ্রাজল গ্যাসট্রো (প্যান ৪০, প্যানটপ ৪০ এবং প্যানটোসিড ডিএসআর) এই ওষুধগুলি পরীক্ষায় দেখা গেছে তাদের গুণমান ঠিক নেই। রাজস্থান ড্রাগ কন্ট্রোলার রীতিমত সতর্ক করেই জানিয়েছে, ড্রাগ এণ্ড কসমেটিক এ্যাক্ট ১৯৪০ অনুসারে এব্যাপারে এই সমস্ত ওষুধ ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন এবং এব্যাপারে ওই সমস্ত ওষুধের মজুদের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। জানা গেছে, রাজ্স্থান ড্রাগ কন্ট্রোলারের পক্ষ থেকে এব্যাপারে এই নির্দেশিকা আগষ্ট মাসের মাঝেই দুই বর্ধমান জেলার এ্যাসিস্ট্যাণ্ট ডিরেক্টর দপ্তরেও এসে পৌঁছেছে। এই দপ্তরের এক ইন্সপেক্টর জানিয়েছেন, তাঁরা রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা অনুসারে গোটা বিষয়টিতে নজর রাখছেন। যদিও খোদ পূর্ব বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিক ডা. প্রণব রায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,এব্যাপারে কোনো নির্দেশিকাই তাঁর কাছে আসেনি। এমনকি এব্যাপার তিনি কিছু জানেনও না। এদিকে, এই ঘটনা সম্পর্কে ওয়েষ্ট বেঙ্গল মেডিকেল এণ্ড সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ ইউনিয়নের বর্ধমান জেলার সম্পাদক কৌশিক ব্যানার্জ্জী জানিয়েছেন, তাঁরা বিভিন্ন কোম্পানীর ওষুধ বিক্রি করেন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই। সেক্ষেত্রে তাঁরাই কোম্পানীগুলিকে ওষুধের প্রতিক্রিয়া নিয়ে অনেক সময়ই রিপোর্ট দেন। কিন্তু সরকারীভাবে এই নির্দেশিকা আসলেও তা জানাতে এবং ব্যবস্থা নিতে এত দেরী হচ্ছে কেন – সেটাই বিস্ময়ের।
Check Also
বন্ধুর সঙ্গে পিৎজা খেতে বের হয়ে ধর্ষণের শিকার যুবতী, গ্রেপ্তার ৫
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বন্ধুর সঙ্গে পিৎজা খেতে বের হয়ে ধর্ষণের শিকার হলেন এক যুবতী। …